সুদীপ্ত সেন আমার শহরের ছেলে, এটুকু বলেই থেমে গেলেই চলতো। কিন্তু আমার কাছে তাঁর এই সাফল্য আরো আনন্দের, উল্লাসের, কারণ ও আমার বন্ধু ।
নব্বইয়ের দশক থেকে তাঁর সঙ্গে এই সখ্যের সুতো থেকে অনেক ফুল ঝরে গেছে কিন্তু আমরা আছি একই সুগন্ধের বন্ধনে।
সুদীপ্ত এবার দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ পরিচালকের সম্মান পেয়েছে। এটা আমার শহরের গর্ব।
সেটা ১৯৯২এর শীতকাল। আমি ও ভাতৃপ্রতীম রাহুল সেন কলকাতা গিয়েছি। রাহুল ‘ফেরোমেন’ বলে একটা ট্যাবলয়েড আকারে লিটল ম্যাগাজিন করছিলো। আমাদের ‘দ্যোতনা’র সঙ্গেও জড়িয়ে ছিল। আমরা উঠলাম সুদীপ্তর আস্থানায়। তিন জনের মধ্যে আমার বয়সে একটু এগিয়ে ছিলাম। তবে আমরা স্বপ্ন দেখায় ও দেখানোর স্বপ্নে সমান বিন্দুতে। মেঝেতে মাদুর পেতে আমাদের ‘নরক গুলজার’। তখন ও ‘স্যটো’ বলে একটি সর্ট ফিচার ফিল্ম করেছিল। আর প্রচুর কাজ করছিলো, নতুন নতুন ফিল্মের স্বপ্ন, স্বপ্নের জন্য মাটি কামড়ে পড়ে থাকা সেদিনের যুবকটি আজ সফল।
সুদীপ্ত আমাদের কাছে রাণা। জলপাইগুড়ির পরিচিত বামপন্থী পরিবার রায়কতপাড়ার সেনবাড়ি। ওর দিদি আমাদের সবার প্রিয় রত্না দি। রত্নাদির জীবনসঙ্গী মনোজিত রায় সহরের সনামখ্যাত হিরু দা। সত্তরের আধা ফ্যাসিস্ট জামানায় নকশালবাড়ি আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী, জেল খেটেছেন। জলপাইগুড়ির সাংস্কৃতিক জগতের প্রধান ব্যক্তিত্ব গণেশ রায়ের পরিবারের ছেলে আদর্শকে আঁকড়ে ছিল্বন আমৃত্যু। তাদের সন্তান তমোজিত রায় আজ রাজ্যের নাট্য জগতের পরিচিত নাম। রত্না দির মেঝভাই, সুদীপ্তর মেঝদা সমাজসেবী সংগঠন ‘জলপাইগুড়ি ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশনের সহ সভাপতি। এদিক দিয়ে দেখলে সুদীপ্ত বা রাণার চিন্তা চেতনার গড়ে ওঠার ভিত্তিটা অনুভব করা যায়। আমি আশ্চর্য ভাবে গত তিন দশক ধরে এই পরিবারের নিকটজন। তাই এ আমারও আনন্দের, গর্বের।
রাণার বাবা যখন প্রয়াত হন, সেই উপলক্ষে স্মরণ সভা করা হয়েছিল ওদের রায়কতপাড়ার বাড়িতে। অনুষ্ঠান পরিচালনার দায়িত্ব আমার ছিল। সেদিন রাণা একটি দুর্দান্ত স্মৃতিচারণ করেছিল। পরে আমাকে তাঁর সেই সময়ে সুটিং হওয়া ফিল্মের, যা বিহার অঞ্চলের মাফিয়া রাজ নিয়ে ছিল, তার আনকাট কিছু নমুনা দিয়েছিল। আর সে পর্যন্ত ওর করা যাবতীয় ফিল্মের ভিডিও।
এরপর একবার শহরে দেবেশ রায়। আমার বাসায় আড্ডা। রাণা দেবেশ রায়কে প্রস্তাব দিলো তিস্তাকে নিয়ে ফিল্ম করতে চায়। দেবেশ রায়ের সাহায্য দিরকার, স্ক্রিপ্ট করে দিতে হবে। হিরু দা, রত্না দি দেবেশ রায়ের গল্পেই অনেকটা নিয়ে ছিল। দেবেশ রায় রাজী হলেন এককথায়। কিন্তু করোনা কেড়ে নিলো তাঁকে।
‘কেরালা স্টোরি ‘ র সাফল্য ও বিতর্ক যখন তুঙ্গে সেই সময় দুদিনের জন্য জলপাইগুড়ি এলো। মনোজ দার বাসায় দেখা হলো, আড্ডা হলো। সেই সময় ফিল্ম ও বাস্তবতা নিয়ে তর্ক হলো। ও তথ্যের বিষয়ে সত্য তুলে ধরে যুক্তি খাড়া করলো।
সেই সমিয় দান্তেওয়ারা নিয়ে ফিল্মের সুটিং চলছিলো নকশালবাড়ি নিয়ে আমার দুর্বলতা ও জানে। তাই কিছু ভিডিও দেখালো। সেই নারীরা যাদেএ উপর অমানুষিক অত্যাচার করা হয়েছে বিপ্লবের নামে।
এরপর যাবতীয় ব্যস্ততার মধ্যেও মাঝে মাঝে কথা হতো।
আজ শুধু একটা কথাই বলার – রাণা তুমি যুগযুগ জিও।
Leave a comment
Leave a comment