গত ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ঐতিহ্যবাহী শান্তিনিকেতন ‘ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ’ তকমা পায়। আন্তর্জাতিক তকমা পাওয়ার পর প্রথমবার এই হেরিটেজ ট্যুর শুরু হল। ভারতীয়দের জন্য ৩০০ টাকা টিকিটের বিনিময়ে বিশ্বভারতীর ভেতরে সমস্ত ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলো স্বচক্ষে দেখার সুযোগ মিলবে। বিদেশিদের জন্য টিকিটের মূল্য ১ হাজার টাকা। সমস্ত টিকিটেই গাইডকে সঙ্গে ধরা হয়েছে। পর্যটকদের বিশ্বভারতী তথা সংশ্লিষ্ট ভবনগুলির ইতিহাস বুঝিয়ে বলবেন তাদের গাইড। প্রতি রবিবার এখন থেকে এই হেরিটেজ ট্যুর চালু থাকবে।
উল্লেখযোগ্য, কিছুদিন আগেই ইউনেস্কো ঘোষিত ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ বা বিশ্ব ঐতিহ্যক্ষেত্র শান্তিনিকেতনের স্থাপত্য ও ভাস্কর্য কি অবস্থায় রয়েছে তা খতিয়ে দেখতে শান্তিনিকেতনে যান এএসআই এর প্রতিনিধিদল। এই বিশ্ব ঐতিহ্য ক্ষেত্রের অন্যান্য স্থাপত্য ও ভাস্কর্যের সংস্কার কতটা প্রয়োজন তা খতিয়ে দেখতেই শান্তিনিকেতনে আসেন ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের প্রতিনিধিরা। সূত্রের খবর, ক্যাম্পাসের রক্ষণাবেক্ষণের ধরন নিয়ে সন্তুষ্ট হয়নি ওই বিশেষজ্ঞ দল।
সুজিত বসু বিশ্বভারতীর উপাচার্য থাকাকালীন এই উপাসনা গৃহের সংস্কারের কাজ হয়েছিল। ২০২১ সালে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ ঘোষণার আগে ইউনেস্কো প্রতিনিধিদল যখন শান্তিনিকেতনে আসেন, সেই সময় কিছু সংস্কারের কাজ হয়। তারপর থেকে শান্তিনিকেতনের এই ঐতিহ্যক্ষেত্রের কোনও সংস্কারের কাজ হয়নি। যদিও এই উপাসনা গৃহের সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে বলে এএসআইকে দেওয়া চিঠিতে উল্লেখ করেছে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ।
বিশ্বভারতীর প্রতিষ্ঠার সূচনা লগ্নে আচার্য নন্দলাল বসু, রামকিঙ্কর বেজ প্রমুখ বিশিষ্টজন সৃষ্টি সুখের উল্লাসে মেতে শান্তিনিকেতন ক্যাম্পাসে তৈরি করেছিলেন বিভিন্ন স্থাপত্য ও ভাস্কর্য।
তার মধ্যে ঐতিহ্যবাহী কালোবাড়ি, কলের বাঁশি, সাঁওতাল পরিবার, বুদ্ধ, গান্ধী, সুজাতার মূর্তিগুলি উল্লেখযোগ্য। পরবর্তীতে সেগুলি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে রক্ষণাবেক্ষণ করার দায়িত্ব নেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। জটিল সংস্কারের ক্ষেত্রে বিশ্বভারতী অনেক সময় এএসআইয়েরও দ্বারস্থ হয়েছে। তাদের হাত ধরে রবীন্দ্রভবনের শ্যামলী, পাঠভবনের চৈত্য প্রভৃতি মাটির বাড়িগুলি পুনঃসংস্কার হয়েছে। ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের স্বীকৃতি পাওয়ার পর ক্যাম্পাসের রক্ষণাবেক্ষণ আরও গুরুত্ব পেয়েছে। তার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে গঠিত হয়েছে হেরিটেজ সেল। যেহেতু এই মুহূর্তে শান্তিনিকেতন ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ তকমা পেয়েছে, তাই সংরক্ষণের ক্ষেত্রে আরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন। তবে যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ বা সংস্কারের জন্য যথেষ্ট টাকারও প্রয়োজন। সে কারণেই হেরিটেজ সেলের সুপারিশ অনুযায়ী প্রতি রবিবার এই হেরিটেজ ট্যুরের ব্যবস্থা করেছে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ।
