কথা ছিল নতুন বাংলাদেশ গড়ার, অথচ স্বৈরাচারী বলে অভিযুক্ত শেখ হাসিনার জমানা বদলের এক বছর কেটে গেলেও এখনই অনৈক্যের শেষ নেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের। ঠিক ছিল জুলাই মাসেই বাস্তবের মুখ দেখবে জুলাই সনদ। কিন্তু জুলাই পেরিয়ে আগস্ট এসে গেলেও এখনও দিনের আলো দেখেনি সেই সনদ।
কিন্তু জুলাই সনদ আসলে কী? গত বছর পাঁচই আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ৩১ ডিসেম্বর জুলাই প্রোক্লেমেশন বা গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র প্রকাশ করতে চেয়েছিল। যদিও পরে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে জুলাই সনদ ও জুলাই ঘোষণাপত্র দেওয়ার কথা বলা হয়। সরকারের আশ্বাসে নিজেদের অবস্থান থেকে সরে আসেন শিক্ষার্থীরা।
গত ছয়ই জুন জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মহম্মদ ইউনূস জানান, “জুলাই সনদ হল একটি প্রতিশ্রুতি। একটা জনকল্যাণমুখী রাষ্ট্র নির্মাণের জন্য সংস্কার কমিশন যে প্রস্তাবগুলো দিয়েছে, সেগুলোর মধ্য থেকে রাজনৈতিক দলগুলো যে ক’টিতে একমত হয়েছে, তার তালিকা থাকবে এই সনদে।”
কিন্তু শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরপরই সংখ্যালঘুদের প্রতি অত্যাচারের পাশাপাশি চুড়ান্ত অবনতি হয়েছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির। ঐক্যের পরিবর্তে একে অপরের প্রতি দোষারোপ করে চলেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। এমন পরিস্থিতিতেই জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদের দাবিতে রাজধানী ঢাকার শাহবাগ মোড় অবরোধ করে রাখে জুলাই যোদ্ধারা। যদিও পরে আসল ও নকল জুলাই যোদ্ধাদের কীর্তিতে উত্তাল হয় শাহবাগ এলাকা।
কিন্তু কী অবস্থা জুলাই সনদের? প্রথম আলোর রিপোর্ট জানাচ্ছে এখন পর্যন্ত জুলাই জাতীয় সনদের খসড়া চূড়ান্ত হয়নি। অন্যদিকে প্রস্তাবিত সংস্কার কীভাবে বাস্তবায়িত হবে তা নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনও সিদ্ধান্ত বা আলোচনা হয়নি। জুলাই সনদকে একটি আইনি কাঠামোর মধ্যে আনা না হলে বেশ কিছু দল সই করবে না, এমন আশঙ্কাও রয়েছে। তাই এ বিষয়ে একমত হওয়ার পরই তা আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করতে একটু দেরিই হতে পারে। আর এজন্য লেগে যেতে পারে সপ্তাহ খানেক সময়।
কাজেই মহম্মদ ইউনূসের গড়া ঐক্যমত্য কমিশনের কাজে সব রাজনৈতিক দলের সদিচ্ছা ও সহমত থাকলে যে জুলাই সনদ অনেক আগেই হয়ে যেতে পারত, তা এখন বিশ বাঁও জলে বলেই মনে করছেন অনেকে।