বাবা তো বাবাই হয়! কিন্তু নকল বাবা? সেই নকল বাবারা আজও আছেন। তবে সার্টিফিকেটে। আসলে পড়াশোনা চালানোর জন্য এই নকল বাবারাই ভরসা ছিলেন নাগরিকত্বের দাবিতে লড়াই করা তৎকালীন ছিটমহলের পড়ুয়াদের কাছে। গল্পের মতো মনে হলেও এটাই সত্যি ছিল তৎকালীন ছিটমহলের বহু পড়ুয়ার কাছে।
আর সেই নকল বাবারা এখনও থেকে গিয়েছেন তাদের স্কুল, কলেজের নথিতে। একেবারে অবাক করা কাণ্ড!
বছর দশেক আগেই দেশের মানচিত্র থেকে মুছে গিয়েছে ছিটমহল শব্দটা। এখন সাবেক ছিটমহল। নাগরিকত্ব না পাওয়ার জ্বালা বছরের পর বছর ধরে ভোগ করেছেন তৎকালীন ছিটমহলের বাসিন্দারা। দীর্ঘ লড়াই। শেষ পর্যন্ত ২০১৫ সালে ভারত-বাংলাদেশ ঐতিহাসিক ছিটমহল বিনিময় চুক্তি। ধাপে ধাপে ‘নাগরিকত্ব’ পেলেন তৎকালীন ছিটমহলের বাসিন্দারা। তবে সেই ছিটমহল বিনিময়ের ১০ বছর পরেও এলাকায় ঘুরলে বোঝা যায় অতীতের ক্ষত পুরোপুরি শুকোয়নি এখনও। নাগরিকত্ব না পাওয়ার যে কী জ্বালা সেটা হাড়ে হাড়ে জানেন তৎকালীন ছিটমহলের বাসিন্দাদের অনেকেই।
একেবারে নেই রাজ্যের বাসিন্দা হিসাবে থেকে গিয়েছিলেন বছরের পর বছর। দূর থেকে দেখতেন গণতন্ত্রের উৎসব। কিন্তু ভোটাধিকার প্রয়োগের অধিকার ছিল না। দূর থেকে দেখতেন আলো জ্বলছে মূল ভূখণ্ডে। কিন্তু তৎকালীন ছিটবাসীদের ঘরে জমাট অন্ধকার। এখানেই শেষ নয়, একে তো বিদ্যুৎ নেই। তার উপর অশিক্ষার অন্ধকার! স্কুলই তো নেই, পড়বেন কোথায়? এবার শুরু হল শিক্ষা পাওয়ার জন্য নতুন করে লড়াই। কিন্তু ছিটমহলের ঠিকানায় সেই সময় কোচবিহারের স্কুলে ভর্তি হওয়া সহজ ছিল না। অগত্যা মূল ভূখণ্ডের কোনও পরিচিতকে নকল বাবা সাজিয়ে সেখানকার ঠিকানা উল্লেখ করে স্কুলে ভর্তি হওয়া শুরু করলেন তৎকালীন ছিটমহলের বাসিন্দাদের একাংশ।
এ এক অন্য লড়াই। এদিকে বর্তমানে তাঁরা নাগরিকত্ব পেয়েছেন। কিন্তু স্কুলের সার্টিফিকেটে জ্বলজ্বল করছে সেই নকল বাবার নাম!
সাবেক ছিটমহলের এক বাসিন্দা বলেন, ‘ইন্ডিয়ার লোককে বাবা বানিয়ে নাজিরহাটের স্কুলে ভর্তি হয়েছিলাম। এটা ছাড়া তো উপায় ছিল না। নকল বাবারা এখনও আছেন সার্টিফিকেটে। ওরা ইন্ডিয়ান। আমরা ছিটের। স্কুলজীবনে বার বার মনে হত সেই কথাটা। সেই যন্ত্রণাটা এখনও ভুলতে পারিনি।’