চুল পড়া অনেক সময়েই শুধু চুলের যত্নে গাফিলতির ফল নয়, বরং শরীরের ভেতরের সমস্যার একটি লক্ষণও হতে পারে। অনেক সময় হরমোনজনিত সমস্যার পাশাপাশি মানসিক চাপ বা স্ট্রেস থেকেও শুরু হতে পারে অতিরিক্ত চুল পড়া।
সম্প্রতি একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, দেশের মেট্রো শহরগুলিতে প্রায় ১.৬৩ লক্ষ পুরুষ-মহিলা অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে মানসিক চাপই চুল পড়ার অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে উঠে এসেছে। বিশেষ করে মেট্রো শহরে মানুষ প্রথমে স্ট্রেসের কারণে বার্নআউট বা ক্লান্তির লক্ষণ অনুভব করেন, পরে তার প্রভাব পরে চুলে।
এই কারণে চুল রক্ষা করতে গেলে শুধু বাইরের যত্ন নয়, দরকার সঠিক পুষ্টি ও জীবনযাত্রার পরিবর্তন। ডার্মাটোলজিস্ট ডা. কল্যাণী দেশমুখ জানিয়েছেন এমনই ৮টি গুরুত্বপূর্ণ টিপস—
১. প্রোটিনে গুরুত্ব দিন
চুলের মূল উপাদান হচ্ছে কেরাটিন, যা একধরনের প্রোটিন। তাই প্রতিদিনের খাবারে ডিম, ডাল, দুধ, বাদাম, সয়া ইত্যাদি উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাবার রাখুন।
২. আয়রন ও ভিটামিন ডি গ্রহণ করুন
কম আয়রন বা ভিটামিন ডি লেভেল অনেক সময় চুল পড়ার আড়াল থাকা কারণ। পালং শাক, বিট, খেজুর, ফোর্টিফায়েড সিরিয়াল খান। প্রয়োজনে রক্তপরীক্ষা করে সাপ্লিমেন্ট নেওয়া যেতে পারে।
৩. ওমেগা-৩ যুক্ত খাবার খান
ফ্ল্যাক্সসিড, আখরোট, সামনের মতো ফ্যাটি মাছ খাবারে রাখুন। এটি চুলের ফলিকলকে পুষ্টি দেয় এবং ইনফ্লেমেশন কমায়।
৪. জলপান ও প্রোবায়োটিকস
প্রতিদিন পর্যাপ্ত জল খান এবং দই বা কেফিরের মতো প্রোবায়োটিক জাতীয় খাবার খান। এতে পেট ভালো থাকে এবং পুষ্টি শোষণ ঠিকঠাক হয়, যার ইতিবাচক প্রভাব পড়ে চুলে।
৫. গরম জল ও কেমিক্যাল ব্যবহার কমান
গরম জল দিয়ে চুল ধোয়া, বারবার হিট স্টাইলিং, রিবন্ডিং বা কেমিক্যাল ট্রিটমেন্ট চুলের ক্ষতি করে। সালফেট-মুক্ত হালকা শ্যাম্পু ব্যবহার করুন।
৬. মানসিক চাপ কমান
চিরস্থায়ী মানসিক চাপ টেলোজেন এফ্লুভিয়াম নামক একধরনের চুল পড়ার সমস্যা তৈরি করে। নিয়মিত যোগা, ব্যায়াম, ডায়েরি লেখা বা দিনে অন্তত ৩০ মিনিট মোবাইল ছাড়া সময় কাটানোর অভ্যাস গড়ে তুলুন।
৭. ঘুম ঠিক রাখুন
ঘুমের সময় শরীরে মেরামত ও বৃদ্ধি প্রক্রিয়া চলে। প্রতিদিন ৭–৮ ঘণ্টা টানা ঘুমানোর চেষ্টা করুন, যাতে কর্টিসল হরমোন নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং চুল পড়া কমে।
৮. নিয়মিত স্ক্যাল্প ম্যাসাজ
প্রতি সপ্তাহে একবার নারকেল বা রোজমেরি তেলের হালকা ম্যাসাজ করুন মাথায়। এতে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে এবং স্ট্রেস কমে।
চুল পড়া কমাতে গেলে শুধু বাইরের যত্ন নয়, মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখাও জরুরি। তাই আজ থেকেই সচেতন হোন, নিজের যত্ন নিন।