প্রসিদ্ধ কৃষ্ণের ইযর্কার জোস ট্যাং এর উইকেট ভেঙে দিতেই সাজঘর থেকে বেরিয়ে এলেন। তিনি ক্রিস ওকস। যাঁর বাঁ-কাঁধ জুড়ে মোটা ব্যান্ডেজ আর স্লিং-এ রাখা বাঁ হাত। ক্যামেরা ফোকাস করতে যা ধরা পড়ছিল সাদা জার্সি ও সাদা সোয়েটারের ভেতর থেকে। ব্যাটটি ধরা ছিল ডান হাতে। দলের প্রয়োজনে ভাঙা কাঁধ নিয়েই বাইশ গজে নেমে পড়েছেন বছর ছত্রিশের মিডিয়াম পেসার কাম অলরাউন্ডার। সাজঘর থেকে মাঠে নেমে পড়া নির্ভীক ক্রিকেটারকে ততক্ষণে সহর্ষ করতালি দিয়ে বরণ করে নিয়েছে ওভালের ভরা গ্যালারি।
একহাতে ব্যাট ধরেই নন স্ট্রাইকিংএন্ডে দাঁড়িয়েছেন ওকস। ভরসা হতে চেয়েছেন অ্যাটকিনসনের। ইংল্যান্ডে জয়ের জন্য তখনও দরকার ১৭ রান। শেষ জুটিতে সেই মিরাকল অবশ্য ঘটেনি। তবে দলের রান ৩৫৭ থেকে ৩৬৭ করতে যোগ্য সহায়তা দিয়েছেন তিনি। মহম্মদ সিরাজের বল মুড়িয়ে দিয়েছে ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংস। কিন্তু এই ওকসকে পাশে নিয়েই ১০ রান যোগ করেছেন অ্যাটকিনসন। রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে ৬ রানে জিতে সিরিজ ২-২ করেছে সফরকারী ভারত।
এদিন বাইশ গজের লড়াইতে ২ ওভার ১ বল গড়ানোর সময় একটা বলেরও মুখোমুখি হতে হয়নি ওকসকে। ওভারের শেষ ডেলিভারিতে সিঙ্গল রান নিয়ে পরিত্রাতা হয়েছিলেন অ্যাটকিনসন। তাই নন স্ট্রাইকিং এন্ড থেকেই শেষমেশ ফিরেছেন সাজঘরে। সিরাজ বা প্রসিদ্ধের সামনে একহাতে ব্যাট করতে হলে কী যে হতো তা ভেবেই আতঁকে উঠেছিলেন মাঠে বা টেলিভিশনের পর্দায় চোখ রাখা ক্রীড়া অনুরাগীরা। তবে এদিন যেটুকু সময় তিনি মাঠে ছিলেন, সেটুকুতেই বুঝিয়ে দিয়েছেন দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা। দেখিয়েছেন তাঁর সাহসিকতা।
ম্যাঞ্চেস্টারে চতুর্থ টেস্টে ঋষভ পন্থ ভাঙা পা নিয়ে ব্যাট করেছেন। দলের প্রয়োজনেই ৭৫ বলে ৫৪ রানের ইনিংসও গড়েছেন। অন্যদিকে, ক্রিস ওকস চোট পেয়েছেন ওভালে পঞ্চম টেস্টের প্রথম দিনে। ফিল্ডিং করার সময় গুরুতর আহত হন। যার জেরে প্রথম ইনিংসে ব্যাটও করেননি।। তবে দলের প্রয়োজনে ব্যাট করতে হলে প্রস্তুতিও সেরেছেন। ভাঙা কাঁধেই তাঁর থ্রো ডাউন করার কথা জানিয়েছেন জো রুট করেছেন।
টেস্ট ক্রিকেটে পন্থ কিংবা ওকস যেমন চোট নিয়ে মাঠে নেমে হৃদয় জিতেছেন, তেমনি সাম্প্রতিক অতীতের ওডিআই বিশ্বকাপে চোট নিয়ে খেলেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার ব্রেট লি এবং গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। ২০১১-র বিশ্বকাপে রক্তাক্ত ভ্রুর ক্ষতস্থান ঢেকে বল করেছেন অজি পেসার লি। তারকা অলরাউন্ডার গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, ২০২৩ বিশ্বকাপে পেশির টানে কাবু হয়েও আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে অপরাজিত ২০১ রানের ইনিংস গড়েছেন।
আর সেই কারণেই ম্যাচের ফলাফল ঘিরে যতো মাতামাতিই হোক না কেন বাইশ গজের লড়াকু চরিত্রদের বীরের আসনে বসিয়েছেন ক্রীড়া অনুরাগীরা। পন্থ আর ওকসে এই তালিকাকেই আরও সমৃদ্ধ করেছেন।
একই ভাবে উল্লেখ করা যায়, ২০০২ সালে অ্যান্টিগুয়া টেস্টে ভাঙা চোয়ালে ব্যান্ডেজ জড়িয়ে বল করেন কুম্বলে। ২০০৯ সিডনি টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ভাঙা হাতে ব্যাট করেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার গ্রেম স্মিথ। অ্যাসেজ সিরিজে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে চোট নিয়েই ব্যাট করেছেন অজি স্পিনার নাথান লিয়ঁ। ১৯৮৪ সালে হেডিংলে টেস্টে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে একহাতে ব্যাট করে দলকে জিতিয়েছিলেন ম্যালকম মার্শাল। হাতের বুড়ো আঙুল দু-দুবার ভাঙা সত্ত্বেও দলকে জিততে সাহায্য করেছেন মার্শাল।