মা নন্দীকেশ্বরীর মন্দির। বীরভূম জেলার সাঁইথিয়ার বুকে রয়েছে এই মন্দির। এই মন্দির শুধু পৌরাণিক কথাতেই নয়, তান্ত্রিক সাধনার ক্ষেত্রে রয়েছে এই প্রাচীন মন্দিরের স্থান।
পৌরাণিক বিশ্বাস অনুযায়ী, সতীর দেহ খণ্ড খণ্ড হওয়ার পর যেসব স্থানে তার অঙ্গ পড়েছিল, তারই এক স্থান হল এই সতীপীঠ। এখানে নাকি মায়ের কণ্ঠহার পতিত হয়েছিল। আর সেই ঐতিহ্য বহন করে আসছে সাঁইথিয়ার নন্দীকেশ্বরী মন্দির।
দেবী ভক্তদের কাছে পূজিত হন মা দুর্গার এক বিশেষ রূপে।
এই মন্দির শুধু পৌরাণিক বিশ্বাসে থেমে থাকেনি, সাধক বামাক্ষ্যাপার কাহিনি এই মন্দিরকে করেছে আরও জ্যোতির্ময়। জানা যায়, তারাপীঠে সাধনারত বামাক্ষ্যাপার স্বপ্নে একদিন আবির্ভূত হন মা নন্দীকেশ্বরী। তিনি আদেশ দেন, প্রথমে তাঁর পূজা করতে হবে, তবেই মিলবে সাধনার সার্থকতা। মায়ের সেই স্বপ্নাদেশ পালন করেই নাকি বামাক্ষ্যাপা পেয়েছিলেন সিদ্ধিলাভ। সেই থেকেই আজও বহু তারাপীঠগামী তীর্থযাত্রী এই পথেই থেমে যান মা নন্দীকেশ্বরীর চরণে।
জানা যায়, একসময় এক বটবৃক্ষের নিচে ছিলেন মা, পরে স্বপ্নাদেশ পেয়ে স্থানীয় জমিদার ও জনগণের সহায়তায় নির্মিত হয় বর্তমান মন্দির। তার সংলগ্ন এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছে একটি জগন্নাথ মন্দিরও। কালীপুজোর মতো বিশেষ উৎসবের সময় ভক্তসমাগম হয় বিশাল। ভক্তদের সুবিধার্থে এখানে একটি কম খরচের লজ তৈরি করা হয়েছে, যেখানে দূরদূরান্ত থেকে আগত তীর্থযাত্রীরা রাত্রিযাপন করতে পারেন।
এই সতীপীঠ ঘিরে শুধুই ভক্তিভাব নয়, রয়েছে এক অদ্ভুত শক্তির ছোঁয়া, যা যুগ যুগ ধরে আকর্ষণ করে আসছে হাজার হাজার মানুষকে। আর সেখানেই নিহিত মা নন্দীকেশ্বরীর প্রকৃত মাহাত্ম্য। ভ্রমণপিপাসু ও আধ্যাত্মিক মনস্কদের জন্য অবশ্য দর্শনীয় এক স্থান হয়ে উঠেছে সাঁইথিয়ার এই মন্দির চত্বর।