মুখ্যমন্ত্রী হয়ে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য রাজ্য প্রশাসনের কাজে গতি আনতে একটি আপ্তবাক্য সামনে এনেছিলেন “পারফর্ম অর পেরিস”। আসন্ন ২৬ এর নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সাফল্য পেতে একই ধাঁচে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসকে নতুন মন্ত্র দিলেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। একইসঙ্গে বিজেপিকে বিধানসভায় ৭৭ থেকে ৪০-এ নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার দলের সমস্ত স্তরের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকে অভিষেকের স্পষ্ট বার্তা, “পারফরম্যান্স শেষ কথা। যে বুথে পার্টি বারবার হারছে তাদের দায়িত্বে থাকার অধিকার নেই। সেই সব বুথে ব্লক লেভেল এজেন্ট ও বুথ সভাপতি পাল্টাতে হবে। কারও পায়ে ধরে থাকা যাবে না। দল থাকলে আপনি থাকবেন।” মূলত এদিনের বৈঠক থেকেই তিনি দলীয় কর্মীদের কোমর বেঁধে নেমে পড়তে বলেন এবং বিজেপি শিবিরে লড়াইয়ের চরম বার্তা পৌঁছে দেন।
মূলত এই দিনের বৈঠকে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের রণকৌশল ও ইস্যু কী হবে, তার আভাস দিয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। দলীয় সংগঠন এবং দলের প্রতি নিষ্ঠা এই দুটি বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ২৬ এর বিধানসভা নির্বাচন শুধুমাত্র নিছকই নির্বাচন নয়, বাংলা ও বাঙালির অস্মিতা, বাংলা ভাষা রক্ষা এবং নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই বলে বিবৃত করেছেন অভিষেক। তাঁর কথায়, ” বিজেপি নির্বাচনে জিতলে সবাইকে বাংলাদেশি বানিয়ে দেবে। এ রাজ্যে আমাদের ভাষার অধিকার থাকবে না। বাংলায় নির্বাচনে হেরে নির্বাচন কমিশনকে কাজে লাগিয়ে বাংলা দখলের ষড়যন্ত্র করছে বিজেপি। এনআরসি নোটিস দিয়ে ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ দিয়ে রাজ্যের মানুষকে সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। উত্তরবঙ্গ বিজেপিকে সমর্থন জানিয়েছে। আর ওদেরই এনআরসি নোটিস দেওয়া হচ্ছে। আর তাদের এখন বাঁচাচ্ছে তৃণমূল।”
এই পরিস্থিতিতে দলীয় সংগঠনকে তৃণমূল স্তর থেকে ঢেলে সাজাতে চাইছে তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব। অভিষেকের নির্দেশ, ” দলের উপরে কেউ নয়, সবাইকে নিয়ে চলতে হবে। আমি-তুমি নয়, যারা আমি-তুমি রাজনীতি করবে তার পরিণাম খারাপ হবে। আমরা সবাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৈনিক, তাঁর নির্দেশ মতো চলতে হবে। আমি করব, আপনি করবেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত শক্ত করে বিজেপি নেতাদের জামানত বাজেয়াপ্ত করতে হবে।”
এদিনের বৈঠকে দলীয় কর্মীদের আভিষেকের কয়েকটি কড়া নির্দেশ
যদি কোথাও মনে হয় বিএলও-রা ভুল তথ্য দিচ্ছেন বা বিজেপির হয়ে কাজ করছেন, তাহলে অঞ্চল সভাপতিরা জেলা সভাপতিদের কাছে রিপোর্ট পাঠাবেন। জেলা সভাপতিরা রাজ্য স্তরে তা পাঠিয়ে দেবেন। ৩১ আগস্ট এর মধ্যে এই কাজ সম্পূর্ণ করতে হবে। মনে প্রাণে এখনও যাঁরা সিপিআইএম সেই ধরনের বিএলও-দের চিহ্নিত করতে হবে।
অঞ্চল সভাপতিদের প্রতিটি বুথে ছোট ছোট সভা করতে হবে। এভাবেই ছোট ছোট সভা করে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে। ৩০-৪০ জন মানুষকে নিয়ে ছোট ছোট সভা করুন। মানুষকে বোঝান, মানুষকে দলের বার্তা পৌঁছতে হবে। বিজেপির বাংলা বিদ্বেষ এবং বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করার চক্রান্ত মানুষকে বোঝাতে হবে। যদিও এদিনের বৈঠকে গরহাজির ছিলেন তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়।
বিজেপির পাশাপাশি এদিন নির্বাচন কমিশনকেও এক হাত নিয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপিকে সুবিধা পাইয়ে দিতেই বিহারে ৬৫ লক্ষের বেশি ভোটারের নাম বাদ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এই অভিযোগ তুলে অভিষেকের বক্তব্য, যতদিন রাজ্যে নির্বাচন সম্পন্ন না হচ্ছে, ততদিন দলের প্রতিটি কর্মীকে নিবিড়ভাবে কাজ করতে হবে। ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ দিয়ে সাধারণ মানুষ যাতে সরকারি সুযোগ-সুবিধা না পান, তারই চক্রান্ত করছে বিজেপি এবং নির্বাচন কমিশন। ” বাংলার মানুষকে বিজেপি ঘৃণার চোখে দেখে” বুথে বুথে সাধারণ মানুষ তথা ভোটারদের এই বিষয়টি বোঝাতে হবে নির্দেশ তৃণমূলের সেনাপতির।