অবৈধভাবে ভোটার তালিকায় অস্তিত্বহীন ভোটারদের নাম তোলার অপরাধে রাজ্যের দুই ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার এবং ২ এসিস্ট্যান্ট ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসারকে সাসপেন্ড করল নির্বাচন কমিশন। একইসঙ্গে এই চার সরকারি আধিকারিকের বিরুদ্ধে রাজ্য প্রশাসনকে এফআইআর করার নির্দেশ নির্বাচন কমিশনের। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে সাসপেন্ড করা হয়েছে বারুইপুর পূর্ব বিধানসভা কেন্দ্রের ইআরও দেবোত্তম দত্ত চৌধুরী এবং একই কেন্দ্রের এইআরও তথাগত মণ্ডলকে। সাসপেন্ড করা হয়েছে ময়না বিধানসভা কেন্দ্রের ইআরও বিপ্লব সরকার এবং ওই বিধানসভা কেন্দ্রের এইআরও সুদীপ্ত দাসকে। এই চার সরকারি আধিকারিকের বিরুদ্ধে অবিলম্বে এফআইআর রুজু করার জন্য রাজ্যের মুখ্য সচিবকে নির্দেশ পাঠিয়েছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। একই সঙ্গে ডেটা এন্ট্রি অপারেটর হিসেবে কর্মরত ক্যাজুয়াল কর্মী সুরজিৎ হালদারের বিরুদ্ধেও এফআইআর দায়ের করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গত শনিবার রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক এর দপ্তরে অভিযুক্ত ইআরও এবং এইআরওদের নিয়ে বৈঠক করেন রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক মনোজ আগরওয়াল। এরপর সংশ্লিষ্ট দুই জেলা পূর্ব মেদিনীপুর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা নির্বাচনী আধিকারিক বা ডিইওদের কাছে রিপোর্ট চেয়ে পাঠানো হয়। জেলা নির্বাচনী আধিকারিকদের রিপোর্ট সহ রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক এর দপ্তরের রিপোর্ট যায় দিল্লিতে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের দপ্তরে। সমস্ত রিপোর্ট খতিয়ে দেখে অবশেষে আজ মঙ্গলবার জাতীয় নির্বাচন কমিশন অভিযুক্ত দুই ইআরও এবং দুই এইআরও-কে সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত নিল নির্বাচন কমিশন। একইসঙ্গে ডেটা এন্ট্রি অপারেটর হিসেবে কর্মরত ক্যাজুয়াল কর্মী সহ এই চার সরকারি আধিকারিকের বিরুদ্ধে এফআইআর করার জন্য রাজ্য সরকারকেও নির্দেশ নির্বাচন কমিশনের। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে ১৯৫০ সালের ভারতের জনপ্রতিনিরিত্ব আইনের ১৩ বি ধারা অনুযায়ী এই পাঁচজনের বিরুদ্ধে ফৌজদারি দন্ডবিধিতে মামলা রুজু করা হবে। কারণ ভোটার তালিকায় অস্তিত্বহীন ভোটারদের সরাসরি নাম তোলার অপরাধ ফৌজদারি দন্ডবিধির আওতার মধ্যে পড়ে বলে জানিয়েছে কমিশন। এক্ষেত্রে শুধু সংশ্লিষ্ট আইন ভঙ্গই করা হয়নি বরং সাংবিধানিক অধিকারকে লঙ্ঘন করা হয়েছে। সরকারি আধিকারিক হয়েও এ ধরনের অনৈতিক কাজ বরদাস্ত করা হবে না বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। উল্লেখযোগ্য দেবোত্তম দত্ত চৌধুরী একজন রাজ্য সিভিল সার্ভিস এগজিকিউটিভ অফিসার যিনি দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা গ্রামীণ উন্নয়নের ডেপুটি প্রজেক্ট ডিরেক্টর হিসেবে কর্মরত। তথাগত মণ্ডল জয়নগর ব্লকে মহাত্মা গান্ধী গ্রামীণ কর্মসংস্থান নিশ্চয়তা প্রকল্পের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রোগ্রাম অফিসার হিসেবে কর্মরত। অন্যদিকে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সংখ্যালঘু সম্প্রদায় সংক্রান্ত ডিস্ট্রিক্ট অফিসার পদে কর্মরত বিপ্লব সরকার রাজ্য সিভিল সার্ভিস এগজিপকিউটিভ পদমর্যাদার একজন সরকারি আধিকারিক। সুদীপ্ত দাস তমলুক ব্লক পঞ্চায়েত একাউন্টস ও অডিট অফিসার হিসেবে কর্মরত। এই চার সরকারি আধিকারিক এর বিরুদ্ধে এফআইআর করার নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
প্রসঙ্গত, পূর্ব মেদিনীপুরের ময়না বিধানসভা কেন্দ্র এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুর পূর্ব বিধানসভা কেন্দ্রে ভোটার তালিকায় বেশ কিছু ভুয়ো ভোটারের নাম ঢোকানো হয়েছে অবৈধ উপায় বলে একাধিক অভিযোগ এসেছিল রাজ্য মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দপ্তরে। এরপরই সংশ্লিষ্ট বিএলওদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সিইও দপ্তর। বিএলও-দের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই ভোটারদের সম্পর্কে তাঁদের কাছে কোনও তথ্য নেই। তখনই সংশ্লিষ্ট ইআরওদের তলব করে সিইও দপ্তর। জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, এই ভোটারদের তথ্য যাচাইয়ে বিএলও-দের কাজে লাগানো হয়নি। বরং সরাসরি এই অস্তিত্বহীন ভোটারদের নাম ভোটার তালিকার মূল সার্ভারে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ইআরও- দের বক্তব্যে সন্তুষ্ট হয়নি মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দপ্তর। এরপর সংশ্লিষ্ট ডিইওদের কাছে সার্বিক রিপোর্ট নিয়ে দিল্লিতে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের কাছে পাঠানো হয়। অবশেষে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে পূর্ব মেদিনীপুরের ময়না বিধানসভা কেন্দ্রের ইআরও এবং এইআরও ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুর পূর্ব বিধানসভা কেন্দ্রের ইআরও এবং এইআরও-কে সাসপেন্ড করে তাঁদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা রুজু করার নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
Leave a comment
Leave a comment