দিনটা ছিল ১৯৪৫ সালের ৬ অগস্ট, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মধ্যেই জাপানের হিরোশিমা শহরে প্রথম বিধ্বংসী মারণাস্ত্র পরমাণু বোমা নিয়ে হামলা চালায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। হিরোশিমায় আণবিক বোমার আঘাতে সব মিলিয়ে মৃত্যু হয় প্রায় ১ লক্ষ ৪০ হাজার মানুষের। কয়েক দিন পর ৯ আগস্ট নাগাসাকিতে আরেকটি পরমাণু বোমা হামলায় মৃত্যু হয় প্রায় ৭৪ হাজার মানুষের। এ তো শুধু মৃত্যুর হিসেব! মানুষের তৈরি মারণাস্ত্র যে কী ভয়ঙ্কর হতে পারে, তা জানা গেল পরবর্তী বছরগুলিতে আরও হাজার হাজার মানুষের আহত হয়ে পড়া ও তেজস্ক্রিয়তার ছোবলে মারা যাওয়ার ঘটনায়।
বুধবার হিরোশিমা শহরে পারমাণবিক বিস্ফোরণের ৮০তম বার্ষিকীতে সমবেত প্রার্থনার জন্য উপস্থিত হয়েছিলেন হাজার হাজার মানুষ। ৮০ বছর পর এসেও আমাদের পৃথিবী আবারও একই আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন হিরোশিমার মেয়র কাজুমি মাতসুয়ি। বিশ্বের নেতারা মনে করছেন, নিজেদের দেশ রক্ষার জন্য পারমাণবিক অস্ত্রের কোনও বিকল্প নেই।
হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পরমাণু বোমা হামলায় বেঁচে যাওয়া মানুষদের নিয়ে তৈরি জাপানি সংস্থা নিহন হিদানকিওকে ২০২৪ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার দিয়েছে নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি। নোবেল কমিটি জানায়, পরমাণু অস্ত্রমুক্ত একটি বিশ্ব গড়ার চেষ্টা এবং পরমাণু অস্ত্র আর কখনও ব্যবহার করা যে উচিত নয়, সেটি প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্যের মাধ্যমে তুলে ধরার জন্য জাপানের সংগঠনটিকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু ঠিক কী করে নিহন হিদানকিও? ১৯৫৬ সালে গঠিত এই সংগঠন জাপানে পারমাণবিক বোমা থেকে বেঁচে যাওয়া মানুষদের বৃহত্তম এবং সবচেয়ে প্রভাবশালী সংগঠন। এর লক্ষ্য পারমাণবিক অস্ত্রের ভয়ঙ্কর মানবিক পরিণতি সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী সচেতনতা বাড়ানো। তাঁদের কাজ, ১৯৪৫ সালের আগস্টে তারা যে ধ্বংসযজ্ঞের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিল তার ব্যক্তিগত গল্পগুলি সকলের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া, যাতে সচেতন হয় গোটা বিশ্ব।
কিন্তু সত্যিই কী সচেতন হয়েছে আজকের পৃথিবী? হিরোসিমা, নাগাসাকির মৃত্যুভূমি কী সত্যিই কোনও শিক্ষা দিয়েছে? বোমা হামলার ৮০ বছরে দাড়িয়ে বলাই যায় পারমাণবিক অস্ত্র বিশ্বব্যাপী হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডারের ৯০ শতাংশই আছে রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দখলে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ হোক বা ইজরায়েল-ইরান সংঘর্ষ, আজও উস্কানিমূলক পরমাণু হানার মুখেই দাড়িয়ে আছে বিশ্ব।
Leave a comment
Leave a comment