ভাষা বৈচিত্র্যকে সামনে রেখেই বিহারের ভোটার তালিকার বিশেষ সংশোধনের প্রতিবাদে সোমবার জাতীয় নির্বাচন সদন ঘেরাও কর্মসূচি পালন করবে দেশের প্রধান বিরোধী দলগুলি। কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকার বিরোধী ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের পক্ষ থেকে এই কর্মসূচির কথা আগেই জানানো হয়েছে। আজ সংসদ ভবন থেকে মিছিল করে নির্বাচন কমিশনের সদর দফতরে যাবেন দেশের প্রধান বিরোধী নেতৃত্বরা। বাংলা ভাষাভাষী মানুষজনের উপর বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে লাগাতার আক্রমণের প্রতিবাদের আবহে বিহারের নির্বাচনে ভোটার তালিকা থেকে ভোটারদের নাম বাদ দেওয়ার অভিযোগ তুলে বিভিন্ন ভাষাভাষীর প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে করা হবে এই মিছিল। বাংলা, হিন্দি, তামিল, মারাঠি, মালওয়ালি, ইংরেজি প্রভৃতি বিভিন্ন ভাষায় প্ল্যাকার্ডগুলি তৈরি করা হয়েছে। ভাষাগত এই বৈচিত্র তুলে ধরার জন্য বিভিন্ন দলকে বিভিন্ন ভাষায় প্ল্যাকার্ড তৈরির দায়িত্ব দিয়েছে ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চ। সোমবার সকাল এগারোটা নাগাদ সংসদের অধিবেশন শুরু হবে। অধিবেশনের শুরুতেই ভাষার উপর আক্রমণ এবং ভোটার তালিকায় কারচুপির অভিযোগ তুলে সংসদ অচল করতে চায় বিরোধীপক্ষ। সংসদের ভিতরে সম্মিলিত প্রতিবাদ তুলে সংসদের অধিবেশন স্তব্ধ করে দেওয়ায় লক্ষ্য ইন্ডিয়া মঞ্চের। এরপর সংসদের মকর দ্বারে জমায়েত করে নির্বাচন সদনের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করবে ‘ইন্ডিয়া’। ‘ভাষার অধিকার, ভোটদানের অধিকার ও গণতন্ত্র রক্ষার অধিকার’ এই স্লোগান, ফেস্টুন এবং বিভিন্ন ভাষাভাষির প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে প্রায় ২০০ সাংসদের মিছিল নির্বাচন কমিশন ঘেরাও কর্মসূচিতে অংশ নেবে। তবে সংসদ ভবন থেকে নির্বাচন সদনের দিকে এগিয়ে যাওয়া মিছিলকে কতদূর যেতে দেওয়া হবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে বিরোধী পক্ষের সাংসদদের। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনে থাকা দিল্লি পুলিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ দেখানো এই মিছিলকে আদৌ দিল্লির রাজপথে চলতে দেবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে অনেকেরই।
বস্তুত সংসদে ভোটার তালিকার স্পেশাল ইনটেন্সিভ রিভিশন বা এসআইআর নিয়ে আলোচনা চেয়েছিল বিরোধীরা। সংসদের অন্যান্য কাজ মুলতুবি রেখে এই আলোচনার দাবিতে ঐক্যবদ্ধভাবে সোচ্চার হয় ইন্ডিয়া। কিন্তু সরকার পক্ষ বিরোধীদের এই দাবিতে কর্ণপাত করতে নারাজ। বরং সংসদের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে এসআইআর নিয়ে কোনও আলোচনা হবে না। অন্যদিকে সুপ্রিম কোর্টে নির্বাচন কমিশন স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, খসড়া ভোটার তালিকা থেকে কী কারণে ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে তা জানাতে নির্বাচন কমিশনের কোনও আইনি বাধ্যবাধকতা নেই। ইতিমধ্যেই নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে ভোট চুরির অভিযোগ তুলেছেন রাহুল গান্ধী। অগেই ধর্মতলায় একুশের সভা থেকে নির্বাচন কমিশন ঘেরাওয়ের ডাক দিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী তথা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অগত্যা মমতার ডাকেই সাড়া দিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে সেই কর্মসূচি পালনে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছে ‘ইন্ডিয়া’।
এসআইআর-এর ফলে বিহারে ৬৫ লক্ষের বেশি ভোটারের নাম খসড়া ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়েছে। কমিশন সাফ জানিয়ে দিয়েছে কী কারণে ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে তা জানাতে বাধ্য নয় তাঁরা। এমনকি সুপ্রিম কোর্টে মামলা করা হলেও নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তে সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে নারাজ দেশের শীর্ষ আদালতও। আগামী নভেম্বরে বিহারের বিধানসভার সাধারণ নির্বাচনের পর ২০২৬-এ পশ্চিমবঙ্গ, তামিলনাড়ু, কেরল ও অসমে বিধানসভার ভোট। ভাষা এবং ভোটদানের গণতান্ত্রিক অধিকারকে সামনে রেখে কেন্দ্র বিরোধী ঐক্যকে আরও মজবুত করতে মরিয়া ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের সদস্যরা।