১২ জুন আহমেদাবাদের সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান দুর্ঘটনায় ২৬০ জনের প্রাণ গিয়েছিল। দুর্ঘটনায় মৃত্যু হওয়া যাত্রীদের পরিবার এখনও আর্থিক ক্ষতিপূরণ পায়নি। যার প্রেক্ষিতে মার্কিন আইনজীবী মাইক অ্যান্ড্রুজ বললেন, আজ যদি রতন টাটা বেঁচে থাকতেন তাহলে কখনওই এই ধরনের বিলম্ব ঘটত না। যে আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ক্ষতিপূরণ আটকে রয়েছে তা কখনওই তিনি হতে দিতেন না বলে অ্যান্ড্রুজ দাবি করেন।
এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান দুর্ঘটনায় ৬৫টিরও বেশি মৃতের পরিবারের হয়ে আদালতে সওয়াল করছেন অ্যান্ড্রুজ।
আহমেদাবাদে ওই দুর্ঘটনার পর প্রায় দুমাস কেটে গিয়েছে। এখনও মৃতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি।
সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বিষয়টি উত্থাপন করেন অ্যান্ড্রুজ। তিনি বলেন, যদি রতন টাটা বেঁচে থাকতেন তবে তিনি অবশ্যই নিহতদের পরিবারের সঙ্গে মিলিত হতেন। আমেরিকার মানুষও জানে, রতন টাটা কেমন ছিলেন। তাঁর নম্রতা, ভদ্রতা, সংস্থার কর্মী-সহ সকলের সঙ্গে স্নেহসুলভ আচরণের কথা আমরা সকলেই জানি। আমার মনে হয়, রতন টাটা আজ যদি এখানে থাকতেন তাহলে কখনওই সংস্থার কর্মীরা বেতনের জন্য সমস্যায় পড়তেন না। দুর্ঘটনায় মৃত বিমান যাত্রীদের পরিবারগুলো এমন বিড়ম্বনার শিকার হতেন না। মৃতদের পরিবারকে কখনও আর্থিক ক্ষতিপূরণ নিয়ে চিন্তা করতে হত না।
দুর্ঘটনায় মৃতদের ক্ষতিপূরণ না পাওয়া প্রসঙ্গে একটি দুঃখজনক ঘটনার কথা সামনে এনেছেন অ্যান্ড্রুজ। তিনি বলেছেন, এই দুর্ঘটনায় একজন অসহায় বৃদ্ধার ছেলের মৃত্যু হয়েছে। ওই বৃদ্ধা শয্যাশায়ী। ছেলেই ছিল তাঁর পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী। ছেলেকে হারিয়ে ওই বৃদ্ধার রোজগারের কোনও বিকল্প রাস্তা নেই। টাকার অভাবে তাঁর চিকিৎসা হচ্ছে না। এমনকি, মিলছে না পেটভরা খাবার। তাই এখন তাঁকে চিকিৎসা ও ভরণপোষণের জন্য গোটা বিশ্বের করুণার উপর নির্ভর করতে হচ্ছে। ওই বৃদ্ধাকে যদি অবিলম্বে সাহায্য না করা হয় তবে তিনি বাঁচবেন কীভাবে!
অ্যান্ড্রুজ আরও বলেন, ওই বিমান দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানের জন্য ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার এবং ককপিট ভয়েস রেকর্ডারের উপর নির্ভর করতে হবে। যদি দেখা যায়, বিমানের কোনও যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে তাহলে আমেরিকায় একটি পণ্য দায়বদ্ধতা দাবি দায়ের করা যেতে পারে। অন্যদিকে যদি ওই দুর্ঘটনার জন্য এয়ার ইন্ডিয়া দায়ী হয়ে থাকে তাহলে দাবিগুলি সম্ভবত মন্ট্রিল কনভেনশনের আওতায় পড়বে।
উল্লেখ্য, বিমান দুর্ঘটনার প্রায় একমাস পর এয়ার ইন্ডিয়া দুর্ঘটনায় নিহত ২২৯ জন যাত্রীর মধ্যে ১৪৭ জন এবং দুর্ঘটনার সময় মাটিতে ছিলেন এমন নিহত ১৯ জনের পরিবারকে ২৫ লক্ষ টাকা করে অন্তর্বর্তীকালীন ক্ষতিপূরণ দিয়েছে। পরবর্তী ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণের অঙ্ক চূড়ান্ত হলে ওই টাকার সঙ্গে তা অ্যাডজাস্ট করা হবে।
টাটা গোষ্ঠী ইতিমধ্যেই মৃতদের স্মরণে দ্য এআই ১৭১ মেমোরিয়াল অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট তৈরি করেছে। ট্রাস্টের তরফে দুর্ঘটনায় মৃত প্রত্যেককে এক কোটি টাকা আর্থিক সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত বিজে মেডিক্যাল কলেজ হস্টেলের কাঠামো পুনর্নির্মাণে সাহায্য করার কথাও বলা হয়েছে। পাশাপাশি ওই হস্টেলের ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেককেই সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান এআই১৭১ আহমেদাবাদের সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ওড়ার কিছুক্ষণ পরই ভেঙে পড়ে। ওই দুর্ঘটনায় বিমানের ২২৯ জন যাত্রী, ১৪ জন বিমান কর্মী এবং মাটিতে থাকা আরও ১৯ জন-সহ ২৬০ জন মারা গিয়েছিলেন।
ভারতের বিমান দুর্ঘটনা তদন্ত ব্যুরো এই মর্মান্তিক ঘটনা সম্পর্কে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে ওড়ার ৯০ সেকেন্ডের মধ্যেই বিমানের দুটি ইঞ্জিন আচমকাই বন্ধ হয়ে যায়। যার ফলে তীব্র গতিতে বিমান মাটিতে আছড়ে পড়ে। এই দুর্ঘটনা সাম্প্রতিককালে ভারতীয় বিমান দুর্ঘটনার ইতিহাসে অন্যতম বড় দুর্ঘটনা।