চুক্তিভিত্তিক বা ক্যাজুয়াল ডেটা এন্ট্রি অপারেটরদের নিয়েই চিন্তিত নির্বাচন কমিশন। ভোটার তালিকা তৈরির কাজে ডেটা এন্ট্রি অপারেটরদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। রাজ্যে এই কাজের জন্য ৬০০ থেকে ৬৫০ ডেটা এন্ট্রি অপারেটরের প্রয়োজন। কিন্তু রাজ্য সরকারকে বারবার সে কথা জানিয়েও সুফল মেলেনি। সরকারিভাবে স্থায়ী কোনও ডেটা এন্ট্রি অপারেটর নিয়োগ না হওয়ায় বাধ্য হয়েই ক্যাজুয়াল বা চুক্তিভিত্তিক ডেটা এন্ট্রি অপারেটরদের দিয়ে ভোটার তালিকা তৈরির কাজ চালানো হচ্ছে। আর এখানেই নির্বাচন কমিশনের কপালে চিন্তার ভাঁজ। কারণ ভোটার তালিকা তৈরির ক্ষেত্রে ভুয়ো ভোটার অন্তর্ভুক্তির কাজে যত অভিযোগ উঠছে তার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই চুক্তিভিত্তিক বা ক্যাজুয়াল ডেটা এন্ট্রি অপারেটরদের দিকে অভিযোগের আঙুল উঠেছে। এমনকী ভোটার তালিকা তৈরির কাজের মূল দায়িত্বপ্রাপ্ত ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার বা ইআরও নিয়োগের ক্ষেত্রেও ভুল সরকারি পরিকল্পনা সমস্যা আরও জটিল করেছে বলে মনে করছে নির্বাচন কমিশন। এ রাজ্যে বাম আমল থেকেই যারা ইআরও হিসেবে নিযুক্ত, তাদের মধ্যে এসডিও পদমর্যাদার আধিকারিকের সংখ্যা কম। বেশিরভাগ ইআরও এসডিও পদমর্যাদার নীচে অথবা সাধারণ হওয়ায় ভোটার তালিকা তৈরির মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য প্রযোজনীয় লোকবলের অভব রয়েই যায়। ফলে সার্বিকভাবে প্রশাসনিক কাজের পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনের কাজ তাদের কাছে ‘বোঝা’ হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু যেহেতু সাংবিধানিক দায়িত্ব ও সময়ানুবর্তী কাজ তাই অস্থায়ী কর্মীদের উপরেই নির্ভর করতে হয় ইআরও-দের। নিজেদের কাজ হালকা করতে কমিশনের আইডি তথা পাসওয়ার্ড অস্থায়ী ডেটা এন্ট্রি অপারেটরদের কাছে দিয়ে দিচ্ছেন, যারা একটি নির্দিষ্ট বেসরকারি এজেন্সি দ্বারা পরিচালিত। আর সেখান থেকেই অস্তিত্বহীন ভোটারদের নাম মূল ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে নির্বিঘ্নে বলে জানতে পেরেছে নির্বাচন কমিশন।
অথচ কাজে ভুল-ভ্রান্তি হলেই দায় বর্তায় ইআরও-র ঘাড়ে।
জাতীয় নির্বাচন কমিশনের স্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে ক্যাজুয়াল কর্মীদের নির্বাচনী কাজে লাগানো যাবে না।
তার পরেও কেন ক্যাজুয়াল কর্মীদের নির্বাচনী কাজে যুক্ত করা হচ্ছে? রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের বক্তব্য, নবান্নকে চিঠি লিখে একাধিকবার স্থায়ী ডেটা এন্ট্রি অপারেটর নিয়োগের কথা জানিয়েছে সিইও দফতর। কিন্তু রাজ্যের পক্ষ থেকে সেভাবে সাড়া না মেলায় বাধ্য হয়েই ক্যাজুয়াল কর্মীদের দিয়ে ডেটা এন্ট্রির কাজ চালানো হচ্ছে। আর অস্থায়ী ডেটা এন্ট্রি অপারেটরদের দিয়ে ভোটার তালিকার কাজ করাতে গিয়েই বারবার ভোটার তালিকার স্বচ্ছ্বতা প্রশ্নের মুখে পড়ছে।
সম্প্রতি রাজ্যে ৪ ইআরও এবং ৪ এইআরও সহ দুজন ক্যাজুয়াল ডেটা এন্ট্রি অপারেটরকে ভোটার তালিকায় কারচুপির ঘটনায় চিহ্নিত করে অভিযুক্ত করেছে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতর। এর মধ্যে পাঁচজনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ করতে ইতিমধ্যেই রাজ্য প্রশাসনকে সুপারিশ করেছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। যে সুপারিশকে মান্যতা না দেওয়ায় বুধবার রাজ্যের মুখ্যসচিবকে দিল্লিতে তলব করেছে নির্বাচন কমিশন। বাকি ৬ জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ এখনও নির্বাচন কমিশনের বিবেচনাধীন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেও মঙ্গলবার পুলিশ ও জেলাশাসকদের বৈঠকে ডেটা এন্ট্রি অপারেটরদের উপরে নজর রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন।