স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে কর্নাটকের ঐতিহাসিক কিট্টুর প্যালেস আবারও আলোচনায়। দুর্গের ভেতরে নির্মিত এই প্রাসাদ শুধু এক সময়ের গৌরবময় স্থাপত্য নয়, বরং ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামের এক অনন্য সাক্ষী। আজও এর ধ্বংসাবশেষ দৃশ্যমান, যা প্রতি বছর অসংখ্য পর্যটক ও ইতিহাসপ্রেমীদের আকর্ষণ করে। ১০০ ফুট চওড়া এবং ৩০০ ফুট লম্বা এই প্রাসাদে একসময় ছিল দেশাইদের জন্য কক্ষ, অতিথি কক্ষ, বৈঠকখানা, রান্নাঘর, ভোজনালয় এবং স্নানঘরের মতো সুপরিকল্পিত বিভাগ।
প্রাসাদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল তামার পাইপের মাধ্যমে জলের যোগান ব্যবস্থা। দুর্গের প্রতিটি অংশে জল পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি আকাশ পর্যবেক্ষণের জন্যও ছিল বিশেষ পাইপ। ঐ সময়ের জন্য এই প্রযুক্তি ছিল এক বিরল উদাহরণ, যা কিট্টুর প্যালেসকে শুধু স্থাপত্য নয়, প্রযুক্তিগত দিক থেকেও সমৃদ্ধ করেছিল।
১৮২৪ সালে দুর্গ পতনের পর প্রাসাদের কিছু কাঠামো ভেঙে নিয়ে ব্যবহার করা হয় হুব্বালির মুরসাবিরা মঠ এবং ধর্মওয়াড় জেলার আম্মিনাভাভির পঞ্চাচার্য মঠ নির্মাণে। এতে প্রাসাদের কিছু ঐতিহ্য ছড়িয়ে পড়লেও মূল কাঠামো ক্রমশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়।
বর্তমানে কর্নাটক রাজ্যের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ কিট্টুর প্যালেসের সংরক্ষণ ও পুনর্নির্মাণে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। স্বাধীনতার এই মাহাত্ম্যময় সময়ে কিট্টুর প্যালেসের সংরক্ষণ শুধু একটি ঐতিহাসিক স্থাপত্য রক্ষা নয়, বরং স্বাধীনতা সংগ্রামের চেতনাকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়ারও সুযোগ।
সম্প্রতি বেঙ্গালুরুর লালবাগ বোটানিক্যাল গার্ডেনে অনুষ্ঠিত ফুল প্রদর্শনীতে কিট্টুর প্যালেসের প্রতিরূপ প্রদর্শিত হয়, যা হাজারো দর্শনার্থীর নজর কাড়ে। ফুল ও শৈল্পিক ভাস্কর্যের মাধ্যমে সাজানো এই প্রতিরূপে ফুটে ওঠে দুর্গের দেওয়াল, ফটক এবং ঘোড়সওয়ার বীরাঙ্গনার দৃশ্য। দর্শনার্থীরা জানান, এটি শুধু একটি স্থাপত্য নয়, বরং কর্নাটকের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও ঐতিহ্যের প্রতীক।
সঠিক সংরক্ষণ ও প্রচারের মাধ্যমে কিট্টুর প্যালেস আগামী দিনে শুধু কর্নাটকের নয়, সমগ্র দেশের অন্যতম প্রধান ঐতিহাসিক পর্যটনকেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে। স্বাধীনতার এই প্রাক্কালে প্রাসাদের পুনর্জাগরণ তাই এক বিশেষ তাৎপর্য বহন করছে।