“আমরা শুধু নারীর ক্ষমতায়নের কথা মুখে বলি না, আমরা কাজে করে দেখাই।” বৃহস্পতিবার কন্যাশ্রী দিবসে এভাবেই নাম না করে কেন্দ্রকে নিশানা করলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কন্যাশ্রী প্রকল্পের ১২ বছর পদার্পণের দিনে মুখ্যমন্ত্রীর সগর্ব ঘোষণা ” সমাজে মেয়েদের ক্ষমতায়ণের ক্ষেত্রে এতো অল্প সময়ে এতো বড় প্রভাব অন্য কোন সরকারি প্রকল্পের আছে বলে আমার অন্তত জানা নেই!” সমাজ মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ” যে সমাজে মেয়েরা ভালো থাকে না, সেই সমাজ কখনো ভালো থাকতে পারে না। সমাজের উন্নয়নের জন্য দরকার মেয়েদের ক্ষমতায়ন। এটা আমার গর্ব, আজ আমাদের রাজ্যে ৯৩ লক্ষের বেশি ‘কন্যাশ্রী’। এই প্রকল্পে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে সাড়ে সতেরো হাজার কোটি টাকা।” যদিও কন্যাশ্রী প্রকল্প চালু হওয়ার পরও এ রাজ্যে আরজিকর কান্ডের মত ঘটনা থেকে শুরু করে নারীদের বিরুদ্ধে সামাজিক অপরাধ বা কোন ধর্ষণের ঘটনা বারবার সামনে এসেছে তবে সেই সামাজিক প্রভাব এই সরকারি প্রকল্পগুলির সুফলে সেভাবে ব্যাঘাত হটাতে পারেনি বলেই মত সরকারি কর্তা-ব্যক্তিদের।
উল্লেখযোগ্য, বিশ্বের দরবারে রাজ্যের কন্যাশ্রী প্রকল্প বহুচর্চিত নাম। ৬২টি দেশের ৫৫২টি প্রকল্পের মধ্যে রাষ্ট্রসংঘের পাবলিক সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করেছে বাংলার কন্যাশ্রী প্রকল্প। সে কথা উল্লেখ করে কন্যাশ্রী দিবসে মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন, বাংলা শুধু মুখে মহিলাদের ক্ষমতায়নের কথা না বলে কাজে করে দেখায়। মুখ্যমন্ত্রীর এই বার্তা প্রকারান্তরে মোদি সরকারকে নিশানা করেই দেওয়া হয়েছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ। প্রসঙ্গত মধ্যপ্রদেশে ‘বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও’ প্রকল্প চালু থাকলেও সামগ্রিকভাবে দেশজুড়ে কেন্দ্রীয় উদ্যোগে কন্যাশ্রী প্রকল্পের মতো কোনো প্রকল্প আগে অনুসৃত হয়নি। শুধু কন্যাশ্রী নয় নারীর ক্ষমতায়নের জন্য পরবর্তীতে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে পরিবারের প্রধান হিসেবে মহিলাদের স্বীকৃতি দেওয়ার পাশাপাশি লক্ষীর ভান্ডার প্রকল্পে ঘরের মহিলাদের আর্থিক ক্ষমতায়নের প্রকল্পটিও যথেষ্ট জনপ্রিয় ও উপযোগী প্রকল্প হিসেবে স্বীকৃত। মূলত কন্যাশ্রী পরবর্তীকালে কেন্দ্রীয় সরকার মহিলাদের মহিলা ক্ষমতায়নের দিকে বাড়তি নজর দিলেও কন্যাশ্রী বা লক্ষ্মীর ভান্ডার এর মতো জনপ্রিয় প্রকল্প চালু করতে পারেনি। সে কথা মাথায় রেখেই কেন্দ্র বিরোধী আন্দোলনের সুর বজায় রাখতে কন্যাশ্রী দিবসেও নারীর ক্ষমতায়নে পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে বাকি দেশের তুলনা টানতে সরাসরি মোদি সরকারকেই ইঙ্গিত করতে চেয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কন্যাশ্রীদের প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা ” কন্যাশ্রীদের বলব জীবনে অনেক বড় হও এবং দেশের মুখ উজ্জ্বল করো, রাজ্যের মুখ উজ্জ্বল করো। তোমরাই একদিন বিশ্ব বাংলা গড়বে। তোমরাই বিশ্বে সম্মানের মুকুট নিজেদের মাথায় পরবে।”
