ঘাটের কাছে গল্প বলে নদীর জল, যেন সুমনের গানের সুত্র ধরেই এবার ঘাট আর নদীর বলে চলা গল্পের ইতিহাসে মজবে শহর কলকাতার মানুষ।সৌজন্যে গার্ডেন রিচ শিপবিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড এবং শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি পোর্ট।হুগলি নদীর তীরবর্তী বাগবাজারের ‘মায়ের ঘাট’ এবং গার্ডেন রিচে ‘সুরিনাম ঘাট’-এর সংস্কারে হাত দিতে চলেছে এই দুই সংস্থা।গার্ডেন রিচ শিপবিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড তাদের কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি কর্মসূচির অংশ হিসেবে কলকাতার শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি পোর্ট -এর সহযোগিতায় ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই দুটি ঘাট সাজিয়ে তোলা হবে।
উত্তর কলকাতার বাগবাজারে অবস্থিত ‘মায়ের ঘাট’-এর গুরুত্ব অনেক। রামকৃষ্ণ পরমহংসের আধ্যাত্মিক সহধর্মিণী মা সারদা দেবীর জীবনযাত্রার সঙ্গেই যুক্ত ছিল এই ঘাট। বাগবাজারে থাকার সময় মা সারদা এই ঘাট ব্যবহার করতেন বলে জানা যায়। সেই আধ্যাত্মিক আবহকে বজায় রেখেই ভক্ত ও দর্শনার্থীদের কাছে তার গুরুত্বকে তুলে ধরাই এই পুনর্গঠন প্রকল্পের লক্ষ্য।
অন্যদিকে কলকাতার বুকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আজও দাড়িয়ে রয়েছে ‘সুরিনাম ঘাট’। ইতিহাস বলছে এই ঘাট থেকেই পাল তোলা জাহাজে করে ১৮৭৩ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি, ৪১০ জন চুক্তিবদ্ধ শ্রমিক এবং তাদের পরিবার নিয়ে সুরিনামের ডাচ উপনিবেশের উদ্দেশে রওনা হয়েছিল। পরবর্তী ৪৩ বছরে, ১৯১৬ সাল পর্যন্ত, মোট ৬৩টি জাহাজে ৩৪,৩০৪ জন ভারতীয় একই পথে সুরিনামে যান।
আজও এই ঘাটে রয়েছে ‘মাই বাপ’ স্মৃতিস্তম্ভ – যা আসলে পুঁটলি বয়ে নিয়ে যাওয়া এক ধুতি-পঞ্জাবী পরিহিত পুরুষ এবং শাড়ি পরা মহিলার ভাস্কর্য। হাতে দুটি ধর্মগ্রন্থ।তথ্য বলছে আজকের সুরিনামের মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি মানুষের শিকড় গাঁথা রয়েছে এই ভারতেই।
ইতিহাসের সাক্ষী থাকা এমন দুই ঘাটকে ফের সেই অতীতের অধ্যায়ের দিকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে উদ্যোগী হয়ে দুই সংস্থা। ৬ আগস্ট, দুই সংস্থা গার্ডেন রিচ শিপবিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড এবং শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি পোর্টের মধ্যে এই প্রকল্পের জন্য একটি চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়ে গেছে। এবার শুধু বাকি নদীর জলকে সাক্ষী রেখে ইতিহাসের সঙ্গে কথা বলা।