ইরান-সমর্থিত লেবাননের শিয়া মিলিশিয়া গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ শুক্রবার কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, যদি সরকার তাদের দমন বা নিরস্ত্র করার পথে এগোয়, তাহলে লেবাননে “কোনো জীবন থাকবে না।” তাদের এই মন্তব্যকে দেশের প্রধানমন্ত্রী নওয়াফ সালাম গৃহযুদ্ধের হুমকি হিসেবে অভিহিত করেছেন।
প্যালেস্টাইনের পাশাপাশি ইসরায়েল লেবাননেও একাধিকবার হিজবুল্লাহর বিভিন্ন ঘাঁটি লক্ষ্য করে সামরিক অভিযান চালিয়েছে। এতে মদত রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরও। হিজবুল্লাহ এর বিরোধিতা করে বলেছে, যতক্ষণ না ইসরায়েল দক্ষিণ লেবাননের দখলদারিত্ব ও হামলা বন্ধ করছে, ততক্ষণ তারা নিরস্ত্র হবে না।
এক টেলিভিশন ভাষণে দেশের সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে হিজবুল্লাহর উপ-মহাসচিব নাইম কাসেম বলেন, “এটা আমাদের সবার দেশ। আসুন আমরা একসঙ্গে মর্যাদার সাথে বাঁচি, একসঙ্গে দেশের সার্বভৌমত্ব গড়ে তুলি। কিন্তু যদি আপনারা আমাদের মোকাবিলা ও ধ্বংস করতে আসেন, তাহলে লেবাননে কোনো জীবন থাকবে না।”
গত দুই বছরে ইসরায়েল হিজবুল্লাহর একাধিক শীর্ষ নেতাকে হত্যা করেছে, যাদের মধ্যে সাবেক নেতা হাসান নাসরাল্লাহ ও প্রায় ৫,০০০ যোদ্ধা রয়েছে, পাশাপাশি তাদের অস্ত্রাগারের একটি বড় অংশ ধ্বংস করেছে।
লেবাননের প্রধানমন্ত্রী নওয়াফ সালাম হিজবুল্লাহর এই বক্তব্যকে “অগ্রহণযোগ্য” ও “গৃহযুদ্ধের ইঙ্গিতপূর্ণ হুমকি” বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, “লেবাননে কোনো দল রাষ্ট্রীয় কাঠামোর বাইরে অস্ত্র রাখার অধিকারী নয়।”
সম্প্রতি লেবানন মন্ত্রিসভা সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছে, যেন অস্ত্র কেবল রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর অধীনেই সীমাবদ্ধ থাকে।
এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধেই হিজবুল্লাহ তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। নাইম কাসেম সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে বলেন, “তারা আমেরিকা ও ইসরায়েলের আদেশে প্রতিরোধ আন্দোলনকে নির্মূল করতে চাইছে। এমনকি যদি তার ফলে গৃহযুদ্ধ হয় বা অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষ তৈরি হয় তা সত্ত্বেও।”
তবে তিনি জানান, হিজবুল্লাহ ও তাদের মিত্র আমাল গোষ্ঠী এখনো আলোচনার সুযোগ খোলা রাখতে চাইছে। কাসেম বলেছেন, “এখনো আলোচনার সুযোগ আছে, সমন্বয় সম্ভব, রাজনৈতিক সমাধানের পথ খোলা রয়েছে। তবে যদি আমাদের ওপর সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া হয়, আমরা প্রস্তুত আছি। তখন দেশজুড়ে রাজপথে আন্দোলনে নামব আমরা। বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়বে আমেরিকান দূতাবাস পর্যন্ত।”
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে গাজা যুদ্ধের সূচনার সময়, প্যালেস্টাইনের মিত্র হামাসের প্রতি সংহতি জানিয়ে হিজবুল্লাহ ইসরায়েল সীমান্তে গুলি বর্ষণ শুরু করে। এর ফলে লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে নতুন করে সংঘাত শুরু হয় এবং বহু এলাকা ধ্বংস হয়ে যায়।
যদিও হিজবুল্লাহ ও আমাল গোষ্ঠী রাজনৈতিকভাবে এখনো প্রভাবশালী। তারা মন্ত্রিসভায় শিয়া মন্ত্রী নিয়োগ করেছে। সংসদের শিয়া আসনগুলি ধরে রেখেছে। তবে প্রথমবারের মতো তারা আর ‘ব্লকিং থার্ড’ সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখতে পারেনি, যা আগে তাদের সরকারকে অচল করে দেওয়ার মতো শক্তি যোগাতো। লেবাননের শিয়া জনগণের মধ্যে এখনো হিজবুল্লাহর ব্যাপক সমর্থন রয়েছে। তবে সমাজের অন্যান্য অংশে তাদের নিরস্ত্রীকরণের দাবি ক্রমেই জোরালো হচ্ছে।