চূড়ান্ত অশান্তি, গোলমালের অভিযোগ। ‘বেঙ্গল ফাইল্স’ ছবির প্রচার-ঝলক অনুষ্ঠানে চূড়ান্ত অব্যবস্থা। প্রদর্শন করতে না দেওয়ার অভিযোগ। আজ কলকাতার এক হোটেলে বিবেক অগ্নিহোত্রী পরিচালিত ছবির ট্রেলার রিলিজের অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই হোটেল কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেন, এই ছবির প্রচার-ঝলক দেখানো যাবে না। কিন্তু কর্তৃপক্ষ কোনও কারণ বলেননি। তার পরেই বন্ধ হয়ে যায় অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানমঞ্চে দাঁড়িয়ে পরিচালক জানান, তাঁকে বলা হয়েছে কোনও এক ‘শক্তি’র তরফে বাধা দেওয়া হয়েছে। বিবেক বলেন, “কোনও কারণ ছাড়াই প্রদর্শনকক্ষের বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেওয়া হয়। সকাল থেকে প্রচুর পুলিশ জড়ো হয়। আমরা তো চোর-ডাকাত নই। ছবি বানাই। সত্যজিৎ রায়ের মাটিতে দাঁড়িয়ে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে, ভাবিনি। এটা যদি একনায়কতন্ত্র না হয় তা হলে কী? এটা যদি ফ্যাসিজ়ম না হয় তা হলে এটা কী?” ছবির প্রযোজক ও অভিনেত্রী, বিবেকের স্ত্রী পল্লবী জোশী বলেন, “এখানে কী হচ্ছে, তা আপনারা দেখছেনই।” “বিবেক অগ্নিহোত্রী বিজেপির একজন কাঠপুতুল। বিজেপির মদতপুষ্ট হয়ে বাংলার কুৎসা করতে সিনেমা তৈরি করেন। বিবেক অগ্নিহোত্রীকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে মরিস সেরুলোর মত রাজ্য থেকে বের করে দেওয়া উচিত”। এমনই প্রতিক্রিয়া দিলেন তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। বিবেকগামী শক্তির হয়ে বাংলার বিরুদ্ধে সমস্ত প্ররোচনামূলক কুৎসা করার জন্যই ‘দ্য বেঙ্গল ফাইলস’ তৈরি করা হয়েছে বলে দাবি কুণালের। বিবেক অগ্নিহোত্রির পরিচালনায় ও অভিষেক আগরওয়াল এবং পল্লবী জোশির প্রযোজনায় চল্লিশের দশকে বঙ্গদেশে ঘটে যাওয়া হিন্দু গণহত্যার প্রেক্ষিতে তৈরি হয়েছে এই সিনেমাটি। সরাসরি সিনেমার পরিচালক বিবেক অগ্নিহত্রীকে আক্রমণ করে কুনাল ঘোষ বলেন ” সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে এই ‘ দ্য বেঙ্গল ফাইলস ‘ তৈরি করা হয়েছে। মানুষে-মানুষে বিভেদ বাড়িয়ে সর্বধর্ম সমন্বয়ের এই বাংলায় অস্থির পরিস্থিতি তৈরি করতে চাইছেন বিবেক।” বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী পশ্চিমবঙ্গে এমনিতেই মেরুকরণের রাজনীতি দীর্ঘদিন ধরে অস্থির পরিস্থিতি তৈরি করেছে। এই অবস্থায় অবিভক্ত বঙ্গের সাম্প্রদায়িক হিংসার প্রেক্ষাপটে ডাইরেক্ট একশন ডে অথবা গ্রেট ক্যালকাটা কিলিংস, নোয়াখালি দাঙ্গার মত ঘটনাকে তুলে ধরে ” হিন্দু গণহত্যা ” হিসেবে বিশ্লেষণ করে তৈরি হওয়া সিনেমার প্রকাশ যে বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যের বাংলায় অস্থিরতা তৈরি করবে তা নিয়েই আশঙ্কা রয়েছে রাজ্যের শাসকদলের। সে কারণেই এই সিনেমা তৈরির কথা প্রকাশ্যে আসতেই প্রথম দিন থেকেই তৃণমূল বিবেক অগ্নিহোত্রী এবং ‘দ্য বেঙ্গল ফাইলস’- এর বিরোধিতায় সরব হয়েছে। কুনাল ঘোষ পাল্টা প্রশ্ন তুলেছেন “গোধরার দাঙ্গার ঘটনা নিয়ে গুজরাত ফাইলস করেননি কেন বিবেক অগ্নিহোত্রী? কেন উত্তরপ্রদেশ ফাইলস তৈরি হবে না? বিলকিস বানো-কে নিয়ে কোনও ফাইল তৈরি হয়নি কেন? মণিপুরে যেখানে মুখ্যমন্ত্রীকে বাড়িতে বাংকার তৈরি করতে হয় সেই মণিপুর ফাইলস তৈরি করা হয়নি কেন? ” গুজরাত, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ মণিপুর অথবা বিলকিসের ওপরে তথ্যচিত্র বা নাটক অথবা সিনেমা করার হিম্মত নেই বিবেক অগ্নিহোত্রীর। স্পষ্ট জানান কুণাল। নিজের বক্তব্যে বিবেক অগ্নিহোত্রী সত্যজিৎ রায়ের কথা বলায় আরও চোটেছেন কুণাল। ” সত্যজিৎ রায়ের কথা বলছে অথচ বিভেদকামী শক্তিকে মদত দিচ্ছে। সত্যজিৎ রায়ের বাংলা এবং গণতন্ত্র প্রিয় বাংলা বলেই এখনো বাংলায় থাকতে পারছেন বিবেক। নাহলে বিবেক অগ্নিহোত্রীকে “অবাঞ্ছিত” বলে ঘোষণা করে তাড়িয়ে দেওয়া উচিত বলেও জানিয়েছেন কুনাল ঘোষ। বাংলাকে চক্রান্ত করে কুৎসা ছড়ানো হলে, বাংলার নামে বদনাম করা হলে বরদাস্ত করা হবে না। পাল্টা হুঁশিয়ারি কুণালের।
