উত্তরাখণ্ডের বিন্দুখাট্টা এলাকার গ্রাম শ্রীলঙ্কা তপু। এই গ্রাম প্রতি বছর বর্ষার সময় তিন মাস মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। স্বাভাবিকভাবেই বাসিন্দারা বর্ষার তিন মাস ওই দ্বীপেই আটকে থাকেন। কার্যত জলবন্দি থাকার মতোই অবস্থা হয় ওই গ্রামের বাসিন্দাদের।
ঠিক যেন শ্রীলঙ্কা! দ্বীপের মতো হয়ে যায় গ্রাম। একেবারে জলবন্দি।
স্থানীয় ভাষায় তপু শব্দের অর্থ দ্বীপ। যেহেতু বর্ষার সময় এই গ্রামটি মূল ভূখণ্ড থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তাই এই নাম। জুন থেকে অগস্ট পর্যন্ত এই গ্রাম জলবন্দি থাকে। বাইরের জগতের সঙ্গে যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এই শ্রীলঙ্কা তপু গ্রামের।
এই গ্রামে ১১৫ টি পরিবারের বাস। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, সরকার ও প্রশাসনকে বারবার বলার পরেও কোনও সুরাহা হয়নি। তাই প্রতিবছরই তাঁদের বর্ষার সময় গ্রামের মধ্যেই আটকে থাকতে হয়। বন্ধ থাকে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা। অসুস্থ হয়ে পড়লে বিশেষ করে বৃদ্ধ এবং অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের সমস্যা সবচেয়ে বেশি। প্রশাসনকে বারবার বলা হয়েছিল গ্রামের সঙ্গে মূল ভূখণ্ডের যোগাযোগ রক্ষার জন্য একটা সেতু তৈরি করে দিতে। কিন্তু সেই সেতু আজও হয়নি।
রঘুবীর সিং নামে গ্রামের এক বাসিন্দা জানিয়েছেন, বর্ষার কয়েক মাস তাঁদের চরম অবর্ণনীয় অবস্থার মধ্যে দিন কাটাতে হয়। বিশেষ করে কোনও কারণে অসুস্থ কাউকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন হলে পরিস্থিতি কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। প্রতিবছরই এই ঘটনা ঘটে। সে কারণে বর্ষা আসার আগে তাঁরা নিজেদের খাবার, ওষুধ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস মজুত করে রাখেন।
একের পর এক অভিযোগ ওঠায় হলদোয়ানি সাব ডিভিশনের ম্যাজিস্ট্রেট রেখা কোলি সম্প্রতি ওই গ্রাম পরিদর্শন করেন।
ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে স্থানীয় প্রশাসন গ্রামবাসীদের সব ধরনের খাদ্য সামগ্রী ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস পৌঁছে দিয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগের তরফেও সব ধরনের জরুরি ওষুধপত্র পৌঁছে দেওয়া হয়েছে ওই গ্রামে। ম্যাজিস্ট্রেট রেখা কোলি জানিয়েছেন, কোনও জরুরি পরিস্থিতিতে শ্রীলঙ্কা তপুর বাসিন্দাদের যাতে আকাশ পথে উড়িয়ে আনা যায় তার জন্য সেখানে একটি হেলিপ্যাড তৈরির চেষ্টা চলছে। ভবিষ্যতে যাতে ওই গ্রামকে বর্ষার সময় এই ধরনের সমস্যায় পড়তে না হয় তার জন্য উদ্যোগী হবে সরকার।
প্রায় ৪৫ হেক্টর জমি নিয়ে গড়ে উঠেছে এই শ্রীলঙ্কা তপু গ্রাম। গ্রামের তিনদিকে রয়েছে জল এবং একদিকে গভীর বনভূমি। যে কারণে বর্ষার সময় এই গ্রামটি মূল ভূখণ্ড থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।