মানবজাতির সামনে হাজির হতে চলেছে এক অবিশ্বাস্য প্রযুক্তি। চিন এবার তৈরি করছে এমন এক “গর্ভবতী রোবট” যে মানুষের মতোই গর্ভে সন্তান ধারণ করে জন্ম দিতে পারবে। গুয়াংঝুর কাইওয়া টেকনোলজির প্রতিষ্ঠাতা ডা. ঝাং কিফেং এই অভিনব প্রযুক্তির উদ্ভাবক। তিনি জানিয়েছেন, রোবটের পেটের ভেতরে কৃত্রিম জরায়ু বসানো হবে। একটি বিশেষ নল বা পাইপের মাধ্যমে জরায়ুতে পুষ্টি পৌঁছে দেওয়া হবে, আর সেখানে প্রায় ১০ মাস ধরে ভ্রূণ বেড়ে উঠবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, আগামী বছরই এর প্রথম প্রোটোটাইপ প্রকাশ্যে আসতে পারে।
যারা দীর্ঘদিন ধরে সন্তানসম্ভবা হতে পারছেন না, তাদের জন্য এটি হতে পারে এক আশীর্বাদ। জানা গেছে, এই রোবট ভাড়া করে সন্তান ধারণ করাতে খরচ হবে প্রায় ১ লক্ষ ইয়ুয়ান (প্রায় ১৪ হাজার মার্কিন ডলার)। অথচ আমেরিকায় একজন মানব সারোগেট ভাড়া করতে খরচ হয় ১ লক্ষ থেকে ২ লক্ষ ডলারেরও বেশি।
ডা. কিফেং বলেন, “কৃত্রিম জরায়ু প্রযুক্তি ইতিমধ্যেই অনেকটা পরিণত। এখন সেটিকে রোবটের শরীরে বসাতে হবে, যাতে বাস্তবে একজন মানুষ ও রোবটের যৌথ ব্যবস্থায় গর্ভধারণ সম্ভব হয়।” তবে এখনও অনেক প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। যেমন ডিম্বাণু ও শুক্রাণু কীভাবে রোবটের জরায়ুতে প্রতিস্থাপন করা হবে, বা সন্তান জন্ম দেওয়ার প্রক্রিয়া কীভাবে ঘটবে, সেগুলো নিয়ে এখনও ভাবনাচিন্তা চলছে।
ইতিমধ্যেই নানা নৈতিক ও আইনি প্রশ্ন উঠেছে এই প্রযুক্তি নিয়ে। এজন্য বিশেষজ্ঞ দল ও স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে একাধিক আলোচনা হয়েছে এবং নীতিমালা তৈরির কাজ চলছে বলে জানা গেছে।
এদিকে, সম্প্রতি নিউ ইয়র্কের ফিফথ অ্যাভিনিউতে একটি মানবসদৃশ রোবটকে হাঁটতে দেখা গেছে। কখনও সে হটডগ খাচ্ছে, আবার কখনও দোকানে জুতো ট্রাই করছে। এটি ছিল আসলে একটি প্রচার কর্মসূচি। একটি বিনিয়োগ সংস্থা KraneShares তাদের নতুন প্রযুক্তিভিত্তিক ETF লঞ্চ উপলক্ষে রোবটকে ব্যবহার করেছিল। এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, “দেখে মনে হচ্ছিল যেন আমি ইতিহাসের এক নতুন সূচনা দেখছি, ঠিক যেন, প্রথম বাতি জ্বালানো বা প্রথম গাড়ি রাস্তায় নামার দৃশ্য।” এখন মানুষের মনে বড় প্রশ্ন, এই প্রযুক্তি কি সত্যিই সন্তানহীন দম্পতিদের আশীর্বাদ হয়ে উঠবে, নাকি এর মধ্যে লুকিয়ে আছে নতুন সামাজিক ও নৈতিক সংকট? সেটাই এখন দেখার বিষয়।
