মিঠুন চক্রবর্তী। বাংলা ও বাঙালির হৃদয়ে তাঁর উপস্থিতি চিরকালীন। অভিনয় দক্ষতার জেরে অনুরাগীদের মন কেড়েছেন তিনি। তবে শুধু বাংলার নয়, বলিউডেও তাঁর বর্ণময় উপস্থিতি। ডিস্কো ডান্সার তো পুরো ইতিহাস। সেই সঙ্গেই ‘ডান্স ডান্স’, ‘প্যায়ার ঝুকতা নেহি’, ‘কসম প্যায়দা করনে ওয়ালি কি’, ‘কমান্ডো’ এমনই নানা মারকাটারি হিন্দি ফিল্ম। মিঠুনের হিন্দি সিনেমা মানেই সিনেমাহল জমজমাট। তবে অভিনয়ের ক্ষেত্রে যে এই দীর্ঘ জার্নি সেটা এতটা সহজ ছিল না।
কেবলমাত্র গায়ের রঙের জন্য বহু অপমান হজম করতে হয়েছে তাঁকে। জাতীয় পুরস্কার পাওয়ার পরেও বলিউডে তিনি ছিলেন ব্রাত্যের দলে। এমনকী জীবনে কঠিন সংগ্রামের দিনগুলিতে ফুটপাতেও শুতে হয়েছে তাঁকে।
জেনে নিন সুপারস্টার, মহাতারকা মিঠুন চক্রবর্তীর জীবন সংগ্রামের সেই দিনগুলোর কথা।
১৬ জুলাই ১৯৫০। কলকাতার একটি নিম্মমধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মেছিলেন মিঠুন। নাম গৌরাঙ্গ চক্রবর্তী। বাড়িতে আর্থিক টানাটানি। এদিকে অভিনয় করার প্রবল ইচ্ছা। আর সেই ইচ্ছা থেকেই ভর্তি হলেন ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়াতে। সেই শুরু।
সারেগামাপা লিটল চ্যাম্পিয়নশিপে মিঠুন সেই প্রথম জীবনের সংগ্রামের কথা কিছুটা বলেছিলেন। তিনি বলেছেন, ‘আমার এমন দিন গিয়েছে যেদিন খালি পেটে শুতে হত। এমন দিন গিয়েছে যেদিন আমায় ভাবতে হত পরের খাবারটা কোথায় পাব, কোথায় একটু শোয়ার জায়গা পাব। জীবনের বহু দিন গিয়েছে যেদিন আমায় ফুটপাতে শুতে হয়েছে।‘
মিঠুন কেন তাঁর বায়োপিক হোক এটা চান না?
মিঠুন নিজেই বলেছিলেন, ‘এটাই আমার একমাত্র কারণ আমি চাই না আমার বায়োপিক হোক। আমার জীবনের কথা কাউকে অনুপ্রেরণা দেবে না। তাকে আরও ভেঙে দেবে (মানসিকভাবে), স্বপ্ন থেকে আরও দূরে ঠেলে দেবে। আমি চাই না এমন কিছু হোক। আমি পেরেছি অন্যরাও পারবেন। এই ইন্ডাস্ট্রিতে নিজেকে প্রমাণ করতে আমায় অনেক কষ্ট করতে হয়েছে।‘
জাতীয় পুরস্কার পাওয়ার পরেও কাজ জোটেনি মিঠুনের
মৃণাল সেনের মৃগয়া। মিঠুনের প্রথম ছবি। প্রথম ছবিতেই জাতীয় পুরস্কার। কিন্তু এটা তাঁর কেরিয়ারে কোনও সহায়তা করা তো দূরের কথা কিছুটা হলেও অন্তরায় তৈরি করে দিল।
একটি সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া একটি সাক্ষাতকারে মিঠুন বলেন, ‘মৃগয়ার পরে আমি জাতীয় পুরস্কার পেলাম। এরপর একেবারে আল পাচিনোর মতো হয়ে গেলাম। মিজেকে মনে মনে ভাবতে শুরু করতাম আমি একেবারে মহান অভিনেতা। আমার হাবভাবই বদলে গেল। প্রযোজকরা এটা দেখে গেট আউট করে দিল আমায়। আমি বুঝতে পারলাম আমার ভুলটা।‘
রেডিয়ো নাশাতে একটি সাক্ষাতকারে মিঠুন বলেন, ‘আমার গায়ের রঙের জন্য আমাকে অনেক কথা শুনতে হয়েছে। এরপর আমি বুঝলাম আমি যদি নাচ করি তাহলে কেউ আর আমার গায়ের রঙ দেখবে না। আমার মতো গায়ের রং নিয়ে কেউ হিরো হবে ভাবতে পারত না। আমার খুব খারাপ লাগত, কাঁদতাম।‘
তবে এরপর অনুরাগীদের মধ্যে মিঠুন প্রমাণ করে দিলেন এভাবেই শূন্য থেকে, কিছু না থেকেও শুরু করা যায়। নিজেকে প্রমাণ করা যায়। ‘সুপারস্টার অফ অ্যা কমন ম্যান।‘
সংকটের দিনে পাশে দাঁড়ালেন জিনাত আমন
একটা সময় ছিল গোটা বলিউড কার্যত অবজ্ঞার চোখে দেখত মিঠুনকে। আর সেই সময় সেই মিঠুনের সঙ্গে সিনেমা করতে রাজি হলেন জিনাত আমন। ‘তকদির’। আর এটাই মিঠুনের অভিনয় জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিল।
মিঠুন সারেগামাপাতে জানিয়েছেন, ’সেই সময় জিনাতজি এক নম্বর নায়িকা ছিলেন। কিন্তু তিনিই এগিয়ে এলেন অভিনয় করতে। এরপর অন্য অভিনেত্রীরাও ধীরে ধীরে রাজি হতে শুরু করলেন। ‘তকদির’ মুক্তির পর থেকে আমি হয়ে গেলাম ‘এ’ ক্যাটাগরির অভিনেতা।‘
Leave a comment
Leave a comment