সমীর ঘোষ
বিহার বিধানসভা ভোট দোরগোড়ায়। স্বস্তিতে নেই বিজেপি। গো বলয়ের রাজনীতিতে একটা সময় পর্যন্ত লালু-নীতীশই ছিলেন শেষ কথা। দীর্ঘসময় ক্ষমতায় ছিল লালুর আরজেডি। কখনও পাশা পাল্টেছে। নীতীশের জেডিইউ ক্ষমতায় এসেছে। লালু-জমানা অতীত। ছেলে রাজস্বীই দল সামলাচ্ছেন। উপমুখ্যমন্ত্রীও হয়েছেন। নীতীশের সঙ্গে সম্পর্ক অম্লমধুর। এই গলায় গলায় তো এই বিষোদ্গার। ক্ষমতায় ফিরতে মরিয়া লালু-পুত্র। ইন্ডিয়া জোটের অন্যতম অংশীদার। গত বিধানসভা ভোট ধরলে শাসক-বিরোধীর ভোট শতাংশের ফারাক বিরাট নয়। মাত্র এক-দেড় শতাংশের তফাত। এই পরিস্থিতিতে তেড়েফুঁড়ে ব্যাটিং তেজস্বীর। বিজেপিও চুপ করে বসে নেই। নীতীশ সঙ্গে আছেন। কিন্তু তিনি কখন কী করেন, গেরুয়া শিবিরের ভরসা নেই। এই বয়সেও প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্নে বিভোর জয়প্রকাশ নারায়ণ, রামমনোহর লোহিয়া, কর্পুরী ঠাকুরের মতো মানুষের সংস্পর্শে থাকা, রাজনীতি শেখা মানুষটা। কিন্তু পাশাপাশি এটাও ঠিক, পাল্টি কুমারের তকমা তাঁর রাজনৈতিক কেরিয়ারে কালো দাগ ফেলে দিয়েছে। কতবার যে বিহার তখতে বসেছেন, কোনও কুইজ মাস্টার প্রতিযোগিতায় প্রশ্ন করলে মাথা চুলকোবেন প্রতিযোগীরা। এই অবস্থায় নীতীশ ঠিক কী ভাবছেন, ভোটের সময় কী করবেন, কোন খেল দেখাবেন, বিশ্বাস নেই। বিশ্বাস যে নেই বিজেপির, পরিষ্কার। ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধন বিহার ভোটে নয়া মাত্রা যোগ করেছে। তরজা তুঙ্গে। পঁয়ষট্টি লক্ষ ভোটার বাদ। তা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা। ছাড়বে না বিজেপি, স্পষ্ট। কমিশন SIR-এর কাজ করবে, দায়িত্ব তাদেরই। বিজেপির কী করার আছে? আছে, কারণ কমিশন-বিজেপি আঁতাঁতের অভিযোগ উঠছে। বিহার জুড়ে ভোটার অধিকার যাত্রায় নেমেছেন রাহুল গান্ধী। ভোট চুরি করতে দেবেন না। বদ্ধপরিকর। সঙ্গী তেজস্বী। রাহুলকেই প্রধানমন্ত্রী দেখতে চান লালু-পুত্র। বিরোধী লড়াই জমছে। চালিয়ে খেলছেন তেজস্বী। কিছুটা ভয় গেরুয়া শিবিরের। তাদের SIR-ই ভরসা। এটাই বিহার রাজনীতিতে এই মুহূর্তের সার-কথা। কারণ, নীতীশের পাল্টির উদাহরণ ভূরি ভূরি।
ফের খেল দেখানো শুরু নীতীশের। কখন কী করে বসেন, নিজেই জানেন না। এখন তো আবার বয়স বাড়ছে। ভিমরতি হলে অবিশ্বাসের কিছু নয়। সেই ভিমরতিই কি সামনে এল? মুসলিম ‘টুপি’ পরতে অনীহা। বৃহস্পতিবার রাজ্য মাদ্রাসা বোর্ডের শতবর্ষ উদযাপনে উপস্থিত ছিলেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী। সেখানেই তাঁকে একটি টুপি পরতে দেওয়া হলে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিয়োতে দেখা গেছে ( যদিও সেই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি জাজবাত২৪ বাংলা), বোর্ডের এক সদস্য প্রথমে নীতীশের মাথায় টুপি পরানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী তা হাতে নিয়ে নেন। পরে সংখ্যালঘু কল্যাণমন্ত্রী জামা খান তাঁকে বারবার টুপি পরতে অনুরোধ করলেও নীতীশ তা নিজে না পরে উল্টে খান-এর মাথায় টুপি পরিয়ে দেন।
এতেই শুরু হয়েছে জল্পনা। মুসলিম ‘টুপি’র প্রতি এমন অনীহা এর আগে নীতীশ কুমারের মধ্যে ছিল না। অতীতে ইফতার অনুষ্ঠান ও ইসলামি অনুষ্ঠানে নিয়মিতভাবেই নীতীশ কুমার টুপি পরে হাজির হয়েছেন। রাজনৈতিক কারণেও ‘যস্মিন দেশে যদাচার’ প্রয়োজন বলে মনে করেন অনেকে। তাছাড়া বিহারে প্রায় ১৮% মুসলিম ভোটার রয়েছেন, যাঁরা একাধিক আসনে প্রভাব বিস্তার করেন। এমন অবস্থায় নীতীশ কুমারের পাল্টি খাওয়ার কারণ কী? বারবার রাজনৈতিক শিবির পরিবর্তনের জন্য বিরোধীরা তাঁকে ‘পাল্টু চাচা’ বলে আখ্যা দেয়।
তবে তথ্য বলছে, গত মার্চ মাসে তিনি নিজের বাসভবনে ইফতার পার্টি দিলেও সেখানেও তাঁকে টুপি পরতে দেখা যায়নি। জানা যাচ্ছে, সম্প্রতি ওয়াকফ আইনকে সমর্থন করায় জেডিইউ-র মুসলিম নেতাদের একাংশ অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এর প্রতিবাদে এই বছরই অন্তত পাঁচ জন মুসলিম নেতা জেডিইউ ছেড়েছেন, যা দলের কাছে বড় ধাক্কা। এদিকে চলছে ভোটার তালিকা সংশোধন নিয়ে বিতর্ক। আশঙ্কা তৈরি হয়েছে যে এর জেরে মুসলিম অধ্যুষিত জেলাগুলিতে অনেকের ভোটাধিকার খর্ব হতে পারে। এই প্রেক্ষাপটে মাদ্রাসা মঞ্চে নীতীশের টুপি না পরার ঘটনাটি রাজনীতির ঘোর আবর্তে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
