১৩০তম সংবিধান সংশোধনী বিল কেন আনতে হচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকারকে?
রাজা বন্দ্যোপাধ্যায়
প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী এবং কেন্দ্র বা রাজ্যের অন্য মন্ত্রীরা যদি পাঁচ বছরের বেশি শাস্তিযোগ্য অপরাধে অভিযুক্ত হয়ে গ্রেফতার হন এবং ৩০ দিনের বেশি সময় জেলে কাটান, তবে তাঁকে পদ থেকে সরানো যাবে, এমন প্রস্তাব রেখে সংবিধান (১৩০তম সংশোধনী) বিল লোকসভায় পেশ করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বিলটি নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া বিরোধীদের। বিরোধী দলগুলো একে “কালা আইন” ও “সংবিধানবিরোধী” আখ্যা দিয়েছে। তাদের অভিযোগ, বিজেপি এ বিলকে হাতিয়ার করে কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে ব্যবহার করে বিরোধী মুখ্যমন্ত্রীদের জেলে পাঠাবে এবং রাজ্য সরকারকে অস্থিতিশীল করবে।
সরকারের দাবি, বিলটি আনা হয়েছে রাজনীতির নৈতিক মান উন্নত করার জন্য। অমিত শাহ বলেন, “আমি ২০১০ সালে গুজরাতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থাকা অবস্থায় গ্রেফতার হয়েছিলাম, কিন্তু আগে থেকেই পদত্যাগ করেছিলাম। নৈতিকতা বজায় রাখা জরুরি।”
বিলটির ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, “গুরুতর অপরাধে অভিযুক্ত হয়ে জেলে থাকা মন্ত্রী সাংবিধানিক নৈতিকতা ও সুশাসনের নীতি ক্ষুণ্ণ করতে পারেন। বর্তমানে সংবিধানে এ ধরনের পরিস্থিতিতে সেই মন্ত্রীকে অপসারণের কোনও স্পষ্ট বিধান নেই।”
সংবিধান সংশোধনী বিল পাশ করতে লোকসভা ও রাজ্যসভায় দুই-তৃতীয়াংশ সমর্থন প্রয়োজন। লোকসভায় অন্তত ৩৬১ ভোট দরকার, এনডিএর হাতে আছে ২৯৩। রাজ্যসভায় প্রয়োজন ১৬০ ভোট, এনডিএর হাতে আছে ১৩২। অর্থাৎ বিরোধীদের সমর্থন ছাড়া বিল পাশ হওয়া কার্যত অসম্ভব।
তবুও কেন বিল পেশ করার সিদ্ধান্ত নিল সরকার ? রাজনৈতিক মহলের ধারণা, আসল লক্ষ্য হল জনমতের লড়াই। বিরোধীরা যদি বিরোধিতা করে, তবে সরকার সেটিকে দুর্নীতিবিরোধী উদ্যোগ আটকে দেওয়ার চেষ্টা হিসেবে তুলে ধরবে। শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হয়েছে, বিলটি ২১ জন লোকসভার সদস্য ও ১০ জন রাজ্যসভার সদস্য নিয়ে গঠিত যৌথ সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হবে। ফলে বিষয়টি দীর্ঘায়িত হবে।
পাশাপাশি এই মুহূর্তে নির্বাচন কমিশনের এসআইআর প্রক্রিয়া ও কমিশনকে ব্যবহার করে বিজেপির ভোট চুরি অভিযোগ নিয়ে উত্তাল জাতীয় রাজনীতি। সংসদ থেকে রাস্তা, একজোটে বিক্ষোভ আন্দোলন করছে ইন্ডিয়া ব্লক। রাজনৈতিক মহলের একাংশের মত, এই তিনটি বিলের মাধ্যমে একটি নতুন ইস্যুকে আলোচনার বিষয় হিসেবে সামনে আনতে চাইছে বিজেপি। তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র বলেন, “সরকার জানে বিল পাশ হবে না। এটি বিরোধীদের ‘ভোট চুরি’ প্রচার থেকে মন ঘোরানোর কৌশল।”
এই বিল আইনে পরিণত না হলেও সমস্যা নেই। আসল উদ্দেশ্য হল বিরোধীদের চাপে ফেলা। তারা যদি বিরোধিতা করে, তবে বার্তা যাবে যে বিরোধীরা চান জেল থেকে বসেই মন্ত্রিত্ব চালানো হোক।”
দিল্লির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল গ্রেফতার হলেও পদত্যাগ না করায় এ ধরনের আইন আনার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। তবে তখন আনা হলে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলা হত।
যদিও বিলটি সংসদে পাশ হলেও, দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় প্রভাব ফেলবে বলে অর্ধেক রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের অনুমোদন লাগবে। পাশাপাশি, এটি “দোষী সাব্যস্ত না হওয়া পর্যন্ত নির্দোষ” নীতির পরিপন্থী হওয়ায় সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।