হিমাচল প্রদেশে চলতি বর্ষার ভয়াবহ তাণ্ডবে জুনের ২০ তারিখ থেকে এখন পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন মোট ২৮০ জন। এর মধ্যে ১৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছে বৃষ্টিজনিত বিপর্যয়ে এবং ১৩৫ জন মারা গেছেন সড়ক দুর্ঘটনায়। এ তথ্য জানিয়েছে হিমাচল প্রদেশ স্টেট ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অথরিটি।
বৃষ্টির কারণে মৃত্যুর মধ্যে রয়েছে ভূমিধসে ১০ জন, হঠাৎ বন্যায় ৯ জন, মেঘভাঙায় ১৭ জন, ডুবে ২৯ জন, বজ্রপাতে ২ জন, অগ্নিকাণ্ডে ১৩ জন, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ১০ জন, খাড়া পাহাড় থেকে পড়ে ৩০ জন এবং অন্যান্য কারণে ২৫ জন। এর মধ্যে কাংড়া জেলায় সর্বাধিক ২৯ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এছাড়াও মান্ডিতে ২৬ জন, চাম্বায় ১৪ জন, কুল্লু ও হামিরপুরে ১৩ জন করে এবং কিন্নৌরে ১২ জন মারা গেছেন।
অন্যদিকে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ১৩৫ জন। এর মধ্যে মান্ডি জেলায় ২২ জন, চাম্বায় ২১ জন, কাংড়ায় ১৮ জন, সিমলায় ১৫ জন, কিন্নৌর ও সোলানে ১৩ জন করে, কুল্লুতে ১১ জন, উনায় ৮ জন, সিরমৌরে ৭ জন, বিলাসপুর ও হামিরপুরে ৩ জন করে এবং লাহৌল-স্পিতিতে ১ জন মারা গেছেন।
বিপর্যয়ে আহত হয়েছেন মোট ৩৪২ জন। এছাড়াও মারা গেছে ১,৮০৩টি গবাদি পশু এবং ২৫,৭০০-এরও বেশি পোলট্রি পাখি। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মানুষের বসতবাড়ি ও সম্পত্তি। ৩০০টি বাড়ি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে, ৩৩৫টি আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ৭৭৩টি গোয়ালঘর ভেঙে গেছে। দোকানপাট, কারখানা, শ্রমিকদের ঘর এবং কৃষিজ সম্পদেও বড় ক্ষতি হয়েছে।
অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতিও ব্যাপক। শুধু পাবলিক ওয়ার্কস ডিপার্টমেন্টের ক্ষতির হিসাব ১,২৬,৪৬০.৬১ লক্ষ টাকা। জল শক্তি বিভাগের ক্ষতি দাঁড়িয়েছে ৭৫,৩২২.৫১ লক্ষ টাকা এবং বিদ্যুৎ খাতে ক্ষতি হয়েছে ১৩,৯৪৬.৬৯ লক্ষ টাকা। এছাড়া শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গ্রামীণ উন্নয়ন, নগর উন্নয়ন, প্রাণিসম্পদ, মৎস্য এবং অন্যান্য খাতেও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সব মিলিয়ে বিভিন্ন খাতে মোট ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ২,২৮,১২৬.৭২ লক্ষ টাকা। এর মধ্যে মান্ডি জেলা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এবং সর্বাধিক প্রাণহানি ঘটেছে কাংড়া জেলায়।
শুধু ২০ আগস্টেই মারা গেছেন আরও ৪ জন, মান্ডি ও উনায় সড়ক দুর্ঘটনায় ২ জন, চাম্বায় পাহাড় থেকে পড়ে ১ জন এবং কুল্লুতে ভূমিধসে ১ জন।
বর্ষা এখনও সক্রিয় থাকায় ভূমিধস, হঠাৎ বন্যা ও সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঝুঁকি থাকছেই। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় উদ্ধার ও পুনর্গঠনের কাজ চলছে। রাস্তা পরিষ্কার, বিদ্যুৎ সংযোগ পুনরুদ্ধার এবং পানীয় জলের সরবরাহ অব্যাহত রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তবে দীর্ঘদিন ধরে একটানা বৃষ্টি এবং বারবার ভূমিধসের কারণে পুনর্গঠনের কাজে বিঘ্ন ঘটছে। HPSDMA রাজ্যবাসীকে অপ্রয়োজনে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় ভ্রমণ না করার এবং আবহাওয়া সংক্রান্ত সতর্কবার্তার প্রতি সজাগ থাকার পরামর্শ দিয়েছে।