কাজী গোলাম গউস সিদ্দিকী
বাংলা অস্মিতার কথা মনে রেখেই বাংলা জয়ের আশায় শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দমদম সেন্ট্রাল জেলের ময়দানে দলীয় সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে বহুবার বাংলায় কথা বললেন। এমনকী বললেন, “আমি আজ এমন সময় বাংলায় এসেছি যখন দুর্গাপূজার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। যখন বড়বাজার থেকে পার্কস্ট্রিট সেজে উঠছে। কুমোরটুলিতে প্রতিমা গড়ার কাজ চলছে’। বিজেপিকে ভোট দেওয়ার জন্য নতুন বাংলা শ্লোগান শুনিয়ে দিলে গেলেন, ‘বাঁচতে চাই, বিজেপি তাই।” বললেন, বাংলার উন্নয়ন বিকশিত ভারতের জয়। বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি সমৃদ্ধ করতে তাঁর সরকার বদ্ধপরিকর। একই সঙ্গে অভিযোগ করলেন, তৃণমূল কংগ্রেস ইন্ডিয়া জোট সত্তার তাগিদে অনুপ্রবেশকারীদের মদত দিচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী, অন্য মন্ত্রীদের ৩০ দিন জেলে থাকলে পদ হারানোর সংস্থান করতে সংবিধান সংশোধন নিয়েও বলতে গিয়ে পার্থ চট্টোপাধ্যায়, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকদের নাম তুলে তৃণমূলকে আক্রমণ করলেন মোদি। তিনি বলেন, এই বিলের বিরোধিতা করছে তৃণমূল। রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী জেলে থাকলেও মন্ত্রিত্ব ছাড়তে রাজি হননি। অথচ তার ঘর থেকে টাকার পাহাড় উদ্ধার হয়েছে। আরও এক মন্ত্রী যিনি রেশনে গরিবের খাবার চুরি করার দায়ে জেলে গিয়েছেন। তিনিও মন্ত্রিত্ব ছাড়তে রাজি নয়। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মুখ্যমন্ত্রী জেলে গিয়েও রাজ্য চালাচ্ছেন এমন ঘটনাও ঘটেছে। সরকারি কর্মচারী ৫০ ঘণ্টা জেলে থাকলে তাকে সাসপেন্ড করা হয়, কিন্তু মন্ত্রীদের জন্য এমন কোনও আইন নেই। তাই দুর্নীতি বিরোধী আইন করতে সংবিধান সংশোধন প্রস্তাব পেশ করেছে তার সরকার।
প্রধানমন্ত্রীর আরও অভিযোগ, বাংলার উন্নয়নে কেন্দ্রীয় সরকার পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে যে বিপুল পরিমাণ টাকা দিচ্ছে, তা মানুষের কল্যাণে খরচ না করে দলীয় ক্যাডারদের জন্য খরচ করে। এই রাজ্যে যত দিন তৃণমূল সরকার থাকবে ততদিন বাংলার উন্নতি হবে না। তৃণমূলকে একহাত নিয়ে মোদির তোপ, আজ টিএমসির পরিচয় হচ্ছে দুর্নীতি। তাই এই সরকার যত দিন থাকবে বাংলার উন্নতি হবে না। তাই পরিবর্তন দরকার। কথায় নয় কাজে চাই পরিবর্তন।
বিজেপি এলে রাজ্যের যুব সমাজকে কাজের তাগিদে ভিন রাজ্যে যেতে হবে না। দমদম এলাকা শিল্পাঞ্চলে পরিণত হবে। বৃহৎ বিনিয়োগ আসবে। বাংলার মানুষকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেন মোদি। তিনি বলেন, গরিব কল্যাণে পশ্চিমবঙ্গ পিছিয়ে। যেমনটা অসম ও ত্রিপুরা ছিল বিজেপি ক্ষমতায় আসার আগে। তিনি দাবি করেন, তাঁর সরকার সব সময় বাংলার পরিকাঠামো, আর্থিক উন্নয়নে গুরুত্ব দিচ্ছে। রেলে আগের তুলনায় তিন গুণ বেশি বরাদ্দ করা হয়েছে।
এদিন কলকাতার মেট্রো রেলের সম্প্রসারণে উদ্বোধন ও কোনা এক্সপ্রেসওয়ে ৬ লেন করার প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন মোদি। যার মোট ব্যয় ৫২০০ কোটি টাকা। এই প্রসঙ্গে মোদির দাবি, পশ্চিমবঙ্গ সরকার নানা কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সুযোগ থেকে এ রাজ্যের মানুষকে বঞ্চিত করছে। কেন্দ্রীয় সরকার স্মার্ট সিটি মিশন নিয়েছে। কিন্ত পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাতে যোগ দেয়নি।
ছাব্বিশের আগে ভোটের ডঙ্কা বাজিয়ে দিয়ে গেলেন প্রধানমন্ত্রী। তৃণমূল সরকার পরিবর্তনের ডাক দিলেন। গত সাড়ে তিন মাসে তিনবার বাংলায় এলেন। বোঝাতে চাইলেন, এ রাজ্য তাঁর চাই। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক আবহে তিনি যে অনুপ্রবেশ নিয়ে গলা ফাটাবেন, তা জানাই ছিল। অনুপ্রবেশ প্রসঙ্গে তৃণমূলকে তুলোধোনা করলেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর অভিযোগ, অনুপ্রবেশকারীদের তৃণমূল সরকার সহায়তা করছে। উন্নত দেশগুলিও অনুপ্রবেশ-বিরোধী ব্যবস্থা নিচ্ছে। আমাদের দেশে অনুপ্রবেশকারীরা গরিব, উপজাতি মানুষদের জমি কেড়ে নিচ্ছে। বদলে দিচ্ছে জনবিন্যাস। এই অনুপ্রবেশকারীদের বিতাড়িত করবে কে? প্রশ্ন ছুড়ে উত্তরও দিয়ে দিলেন নিজেই, ‘বিজেপি, মোদি। আপনার একটি ভোট’।
দমদমের জনসভা থেকে অনুপ্রবেশ নিয়ে কড়া বার্তা দিয়ে গেলেন মোদি। স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, কোনও অনুপ্রবেশকারীকে তিনি এ দেশে থাকতে দেবেন না।