কথায় আছে কারোর পৌষ মাস কারোর সর্বনাশ! এই মেট্রো লাইন তৈরি করতে গিয়েই সর্বনাশ হয়েছিল বউবাজারের বহু মানুষের। আর যেদিন ঝলমলে মেট্রোর উদ্বোধন হল সেদিনও বঞ্চনার আগুন তাঁদের চোখে।
শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শিয়ালদহ-এসপ্ল্যানেড মেট্রোর উদ্বোধন করেন। হাওড়া ময়দান-সেক্টর ফাইভ মেট্রো রুট চালু হওয়ায় খুশি আমজনতা। কিন্তু বউবাজার মেট্রো স্টেশন তৈরির জন্য যাঁরা গৃহহীন হয়েছেন তাঁরা প্রবল ক্ষোভে ফুঁসছেন। কলকাতা পুরসভার ৪৮ নম্বর ওয়ার্ড বউবাজার। ২০১৯ এর ৩১ অগস্ট মেট্রোর সুড়ঙ্গে ধস নামায় ওই ওয়ার্ডের দুর্গা পিতুরি লেন ও স্যাকরা পাড়ার বহু পরিবার ঘরছাড়া হয়েছিলেন।
ঘর ছাড়া ওই পরিবারগুলি আজও নিজেদের ঘরে ফিরতে পারেননি। প্রতিবাদে শুক্রবার দুপুর থেকেই বউবাজার মোড়ে ধরনা দেন তাঁরা। থালা-বাটি বাজিয়ে বিক্ষোভ দেখান।
কলকাতা পুরসভা ইতিমধ্যে ২৮ টি বাড়ি নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছে। কিন্তু গৃহহীনদের দাবি, শুধু বাড়ি করে দিলেই হবে না, কমপক্ষে দশ বছর ওই সমস্ত বাড়ির দায়িত্ব কেএমআরসিএলকে নিতে হবে। শুক্রবার ধরনা মঞ্চে উপস্থিত হয়েছিলেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম।
মেয়র গৃহহীনদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। মেয়র জানিয়েছেন, বাড়ি তৈরি নিয়ে সোমবার একটি উচ্চপর্যায়ে বৈঠক হবে। সেখানে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দারা থাকবেন তেমনই থাকবেন স্থানীয় কাউন্সিলর ও বিশেষজ্ঞরা। কেএমআরসিএল- এর প্রতিনিধিরাও ওই বৈঠকে থাকবেন। সেখানেই কেএমআর সিএলকে ১০ বছরের জন্য ওই বাড়িগুলোর দায়িত্ব নেওয়ার কথা বলা হবে।
স্থানীয় কাউন্সিলর বিশ্বরূপ দে মেট্রো কর্তৃপক্ষের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, মেট্রো কর্তৃপক্ষ কথা দিয়েছিল দু বছরের মধ্যেই ঘর তৈরি করে দেওয়া হবে। কিন্তু সেই কাজ আজও হয়নি। শুধু তাই নয় মেট্রো চলাচল শুরু হয়ে যাওয়ায় বিপর্যয়ের আশঙ্কাও থাকছে। সম্ভাব্য বিপর্যয় ঠেকাতে একটি মনিটরিং সেল তৈরির প্রস্তাব দেন কাউন্সিলর।
৪৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে মেয়র জানান, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি উচ্চপর্যায়ে নজরদারি কমিটি তৈরি করা হয়েছে। ওই কমিটি এলাকায় নজরদারি চালাবে।
উল্লেখ্য, ২০১৯ এর ৩১ অগস্ট বউবাজারে সুড়ঙ্গে ধস নামে। যার ফলে গৃহহীন হয়েছিল বেশ কিছু পরিবার। ঘরবাড়ি হারিয়ে যাযাবরের মত দিন কাটাতে হচ্ছে তাঁদের, এমনটাই অভিযোগ দুর্গা পিতুরি লেনের এক বাসিন্দার। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, মেট্রো কর্তৃপক্ষ বাড়ির ভাড়া দেয় এটা ঠিক। কিন্তু প্রতি বছর তাঁদের বাড়ি বদলাতে হয়। যার ফলে তাঁদের বিভিন্ন জিনিসপত্র নিয়ে যেতেই যেমন খরচ হয় তেমনই আরও অনেক সমস্যা হয়। শুধু তাই নয়, ঠিকানা বদলের কারণে গ্যাসের সংযোগ পেতে সবচেয়ে বেশি সমস্যা হচ্ছে। তাই তাঁরা বাধ্য হচ্ছেন বাজার থেকে বাড়তি দামে গ্যাস কিনতে। গৃহহীন পরিবারগুলির সদস্যদের প্রশ্ন আর কতদিন তাঁদের নিজের বাড়ির জন্য এভাবে অপেক্ষা করতে হবে? আর কতদিন তাদের যাযাবরের মতো এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় ঘুরতে হবে?