নিউ গড়িয়ায় বৃদ্ধাকে খুনের কিনারা করল পুলিশ। বৃদ্ধাকে খুন এবং তাঁর স্বামীকে গুরুতর আঘাত করার অভিযোগে আয়া আশালতা সর্দার এবং তার এক সঙ্গীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে ওই দম্পতির বাড়ি থেকে খোয়া যাওয়া সমস্ত অলঙ্কার। পুলিশের অনুমান, বিপুল পরিমাণ গয়নাগাটি লুট করতেই ওই বৃদ্ধাকে খুন করা হয়েছে।
পুলিস জানিয়েছে, নিউ গড়িয়ার সমবায় আবাসনের একটি দোতলা বাড়িতে থাকতেন প্রশান্ত দাস ও তাঁর স্ত্রী বিজয়া। ওই দম্পতির এক ছেলে ও এক মেয়ে। ছেলে কর্মসূত্রে থাকেন মুম্বইয়ে। মেয়ে থাকেন জার্মানিতে। প্রশান্তবাবুর বাড়িতে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন মধুমিতা। তবে মধুমিতা শুধু বাড়ির বাইরের কাজ করতেন। শুক্রবার সকালেও কাজে এসেছিলেন মধুমিতা। বার বার কলিংবেল বাজালেও কেউ দরজা খোলেননি। তাই প্রতিবেশীদের খবর দেন মধুমিতা। তাঁরা এসে দরজা ভেঙে দেখেন বাড়ির সামনেই মৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে ৭৯ বছরের বিজয়া। মেঝের উপর পড়ে রয়েছে চাপ চাপ রক্ত। অন্যদিকে গৃহকর্তা প্রশান্তকে খাটের তলায় ঢুকিয়ে দেয় খুনিরা। কিছুদিন আগেই তাঁর একটি বড়সড় অস্ত্রোপচার হয়েছে। সে কারণেই তাঁকে খুনিরা খাটের তলায় ঢুকিয়ে দেয়। উদ্ধারের পর ৮৩ বছরের ওই বৃদ্ধকে তাঁর এক আত্মীয় নিজের বাড়িতে নিয়ে গিয়েছেন। এখনও চোখে মুখে আতঙ্কের ছায়া প্রশান্তর। ওই দম্পতি হোম ডেলিভারি থেকে আনা খাবার খেতেন। দেখা গিয়েছে টেবিলে খাবার পড়ে রয়েছে।
তদন্ত নেমে পুলিশ সিসিটিভির ফুটেজ খতিয়ে দেখে। জয়েন্ট সিপি (ক্রাইম অ্যান্ড ট্রাফিক) রূপেশ কুমার জানিয়েছেন, সিসিটিভির ফুটেজে দেখা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার ভোর ৫ টা ১৭ মিনিটে কাজে এসেছিলেন মধুমিতা। কাজ শেষ করে ৫টা ৪২ মিনিটে চলে যান। কয়েক মাস আগেই প্রশান্তর অস্ত্রোপচার হয়েছে। তাই প্রশান্তকে দেখভাল করার জন্য আয়া সেন্টার থেকে এক আয়াকে নিয়োগ করেছিলেন ওই দম্পতি। কিন্তু এক সপ্তাহ আগে ওই আয়া ছুটি নেয়। তার বদলে ১৭ অগস্ট কাজে যোগ দেয় অভিযুক্ত আশালতা।
প্রতিদিন সকাল ৮ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত সে কাজ করত। সিসিটিভির ফুটেজে দেখা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার সে প্রতিদিনের মতোই কাজে এসেছিল। কিন্তু তারপরেই বন্ধ হয়ে যায় সিসিটিভি। এমনকি, বাড়ির মেইন সুইচও বন্ধ করে দেওয়া হয়। ওই বৃদ্ধ দম্পতির চিকিৎসার জন্য কিছুদিন আগে তাঁদের ছেলে ও মেয়ে বেশ বড় অঙ্কের টাকা পাঠিয়েছিল বলে খবর। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, আশালতার ধারণা ছিল ওই বৃদ্ধ দম্পতি তাদের ছেলেমেয়েদের পাঠানো টাকা বাড়িতেই রেখেছেন। সেই টাকা লুট করতেই দলবল জুটিয়ে ওই বৃদ্ধার বাড়িতে হানা দেয় আশালতা। তবে টাকা না পেলেও ওই বৃদ্ধাকে খুন করে তার সমস্ত গয়নাগাটি লুট করে সে। এরপর অভিযুক্ত আয়া পিছনের দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে দিয়ে চম্পট দেয়। শেষ পর্যন্ত কলকাতা ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার একাধিক জায়গায় হানা দিয়ে আশালতা ও তার এক সঙ্গীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এই খুনের ঘটনায় আরও কেউ জড়িত আছে কিনা তা জানতে ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
