রূপালি পর্দা আর রাজনীতির আঙিনা থেকে চিরবিদায় জয় ব্যানার্জির। অভিনেতা-রাজনীতিবিদ সোমবার সকালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বাইপাসের ধারে এক বেসরকারি হাসপাতালে। জানা গিয়েছে, মরদেহ হাসপাতাল থেকে নিয়ে সোজা তারাতলার বাসভবনে যাবে। পরে বিজেপির রাজ্য সদর দফতর ঘুরে অন্ত্যেষ্টি ক্রিয়ার কাজ সম্পন্ন হবে।
নিউমোনিয়া সহ সিওপিডি-র সমস্যা নিয়ে গত ১৫ আগস্ট হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন জয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় রাখা হয় ভেন্টিলেশনে। হাসপাতাল সূত্রে খবর, সকালে হৃদরোগে আক্রান্ত হন। সেই ধাক্কা আর কাটিয়ে উঠতে পারেননি ৬২ পার করা তারকা রাজনীতিক। রেখে গেলেন দ্বিতীয় স্ত্রী অঙ্কিতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মাকে। তাঁর আকস্মিক মৃত্যুতে শোকের ছায়া ফিল্ম ও রাজনৈতিক মহলে।
১৯৬৩ সালের ২৩ মে জন্ম জয় বন্যার্জির। ছোটবেলা থেকেই অভিনয়ই ছিল ধ্যান-জ্ঞান। বিদেশ সরকার পরিচালিত ‘নিমালুর বনবাস’ ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছিলেন। দেবশ্রী রায়ের বিপরীতে করেছেন অভিনয়। বিদেশ সরকার পরিচালিত ‘অপরূপা’ ছবিতেও জুটি বাঁধেন জয়-দেবশ্রী। নবেন্দু চ্যাটার্জির ছবি ‘চপার’-এ জয়ের অভিনয় দৃষ্টি কেড়ে নিয়েছিল সমালোচকদেরও।
নয়ের দশকে পরিচালক অঞ্জন চৌধুরীর ‘হীরক জয়ন্তী’ ছবিটি বক্স অফিসে তাঁকে সাফল্য এনে দেয়। সেই সময় জয় ব্যানার্জি ও চুমকি চৌধুরীর জুটি ছিল হিট। এই জুটির প্রেম শুধু সিনেমার পর্দায় নয়, ব্যক্তিগত জীবনেও ছিল বেশ চর্চার বিষয়। কিন্তু সেই সম্পর্ক খুব বেশি দিন টেকেনি। সম্পর্ক ভাঙার জেরে অঞ্জন চৌধুরীর ছবিতে আর কাজ করেননি জয়৷ অভিমেত্রী চুমকি চৌধুরীর সঙ্গে কাজ না করার অনুশোচনা ও আফশোস জয় অতি সম্প্রতি জানিয়েছিলেন বাংলা সংবাদ মাধ্যমে।
‘মিলন তিথি’, ‘জীবন মরণ’, ‘নাগমতি’, ‘চপার’ ছবির নায়ক বিয়ে করেছিলেন তৃণমূল কাউন্সিলার ও অভিনেত্রী অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যয়কে। কিন্তু তাঁদের সেই বিয়ে খুব বেশিদিন টেকেনি। একটা সময়ের পরে অভিনয় থেকেও দূরে সরে যান বাংলা সিনেমার নিঃসঙ্গ তারকা অভিনেতা। ঘুরে দাঁড়াতে পা রাখেন রাজনীতির রঙিন আঙিনায়। যুক্ত হন ভারতীয় জনতা পার্টিতে। বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য জয় লড়েছেন ভোট যুদ্ধেও।
২০১৪ এবং ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে জয় বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন বীরভূম ও উলুবেড়িয়া কেন্দ্র থেকে। বীরভূমে বিজেপির প্রার্থী জয়ের প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে ছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী অভিনেত্রী শতাব্দী রায় । উলুবেড়িয়া কেন্দ্রে জয়ের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন প্রয়াত সুলতান আহমেদের স্ত্রী সাজদা আহমেদ। লোকসভা কেন্দ্রে দুটি নির্বাচনেই কিন্তু জিততে পারেননি জয়।
রায়দিঘির একদা তৃণমূল বিধায়ক অভিনেত্রী দেবশ্রী রায় দল ছাড়ায় তাঁকে বিজেপিতে নিতে উদ্যোগী হয়েছিলেন বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য জয় ব্যানার্জি। অভিনেত্রী দেবশ্রীকে নিতে শোভন-বৈশাখী জুটিকে বিসর্জন দেওয়ার কথাও প্রকাশ্যে জানিয়েছিলেন সেই সময়। তা নিয়েও দলের মধ্যেই তাঁকে কম সমালোচিত হতে হয়নি।
২০২১ সালের নভেম্বরে, অভিনেতা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেন যে তিনি আর বিজেপির প্রতিনিধিত্ব করবেন না। খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি লিখে দল ছাড়ার কথা জানিয়েছিলেন জয়। তাঁর অভিযোগ ছিল রাজ্য নেতৃত্বের পাশাপাশি তাঁকে অবহেলা করেছে দলও।