মতুয়া ঠাকুরবাড়িতে বিজেপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল তুঙ্গে। দলীয় কোন্দলের আঁচ পড়ল ঠাকুর পরিবারেও। ছোটভাই তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী ও বনগাঁর সাংসদ শান্তনু ঠাকুরকে সরাসরি আক্রমণ করলেন গাইঘাটার বিধায়ক তথা অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসংঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি সুব্রত ঠাকুর। সুব্রতর অভিযোগ, ভক্তদের পূজা অর্চনার জায়গা নাটমন্দিরকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করছেন শান্তনু। যদিও দাদা সুব্রতর তোলা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সাংসদ। তাঁর পাল্টা দাবি, নাটমন্দিরে রাজনৈতিক কিছুই হচ্ছে না। ভক্তদের সুবিধার জন্যই কাজ চলছে। দুই ভাইয়ের এই দ্বন্দ্বের আঁচ পড়েছে পরিবারের মধ্যেও। সুব্রতর পাশে দাঁড়িয়েছেন মা ছবিরানি ঠাকুর ও পরিবারের তৃণমূল সাংসদ মমতাবালা ঠাকুর। অন্যদিকে শান্তনুর পাশে রয়েছেন তাঁর বাবা তথা ঠাকুরবাড়ির কর্তা মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুর।
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বা সিএএ কার্যকর হওয়ার পর থেকেই রাজ্যের নানা প্রান্তে বিজেপি শিবির চালু করেছে। ওই সমস্ত শিবির থেকে সাধারণ মানুষকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে। শান্তনুর উদ্যোগে ঠাকুরবাড়ির নাটমন্দিরেও চলছে শিবির। ওই শিবির থেকে উদ্বাস্তু মতুয়া ভক্তদের আবেদনপত্র জমা দিতে সাহায্য করা হচ্ছে। কিন্তু এই শিবির নিয়েই তীব্র আপত্তি তুলেছেন বিধায়ক সুব্রত। তাঁর সাফ কথা, নাটমন্দিরকে শান্তনু নিজের রাজনৈতিক স্বার্থে কাজে লাগাচ্ছেন। এমনকী, ওই শিবিরে আসা ভক্তদের সুব্রত হুমকি দেন বলেও অভিযোগ। সুব্রতর স্পষ্ট কথা, শান্তনু নাটমন্দির নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছেন। যদিও দাদা তথা গাইঘাটার বিধায়ক সুব্রতর তোলা অভিযোগ শান্তনু উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি দাবি করেছেন, নাটমন্দিরে যা হচ্ছে তা ভক্তদের সুবিধার জন্যই হচ্ছে। এখানে তিনি কোনও রাজনীতি করছেন না। সুর আরও চড়িয়ে শান্তনু অভিযোগ করেন, সুব্রত আসলে বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যেতে চাইছে। ও ভাবছে তৃণমূলে গেলে মন্ত্রী হবে। তাই ও সামান্য বিষয় নিয়েও রাজনীতি করছে। যদিও সুব্রতর পাল্টা দাবি, তাঁর কাছে সবার আগে পরিবার, পরে রাজনীতি।
নাটমন্দিরে চলা এই শিবির নিয়ে ঠাকুরবাড়িতে এখন আড়াআড়ি বিভাজিন। বড়ছেলে সুব্রতকে সমর্থন করে ছবিরানি বলেছেন, শান্তনু ঠাকুরবাড়ির পরিবেশ নষ্ট করছে। তৃণমূল সাংসদ তথা ঠাকুরবাড়ির অন্যতম সদস্য মমতাবালাও প্রশ্ন তুলেছেন, নাটমন্দিরে কেন এই সহযোগিতা শিবির? ছোটছেলে তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনুর পাশে রয়েছেন অবশ্য বাড়ির কর্তা মঞ্জুলকৃষ্ণ। তিনি বলেছেন, শান্তনুকে নাটমন্দিরে শিবির করার অনুমতি তিনি দিয়েছেন। তিনি আরও বলেছেন, পারিবারিক কোনও মতভেদ থাকলে সেটা নিজেদের মধ্যেই আলোচনা করা যেত। কিন্তু কেন তা বাইরে বলা হচ্ছে? ঠাকুরবাড়ির এই পারিবারিক দ্বন্দ্ব আগামী বিধানসভা নির্বাচনে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ।
Leave a comment
Leave a comment