যত সময় যাচ্ছে ততই যেন আলো থেকে অন্ধকারের পথে হাঁটছে মানুষ, গোটা সমাজ। এখনও অসবর্ণ বিয়েতে সম্মতি দেয় না তামিলনাড়ুর এক বিশাল অংশের মানুষ। ভালবাসার জেরে এমন বিয়ে হলেও তাঁর পরিণতি দাঁড়ায় পারিবারিক সম্মান রক্ষায় খুন বা অনার কিলিং। তথ্য বলছে, তামিলনাড়ুর ট্রুনেলভেলিরি জেলায় মাত্র এক বছরে ২৪০টি অনার কিলিং হয়েছে। আধুনিক এই সময়েও পরিস্থিতি ক্রমেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে সভ্য সমাজে এমন উদ্বেগজনক ঘটনা রুখতে পথে নামছে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী)।
রবিবার তামিলনাড়ুতে সিপিএম ঘোষণা করেছে যে, সে রাজ্যে অবস্থিত তাদের সব অফিস জাতিগত বাধা ছাড়া (ইন্টার কাস্ট) এবং আত্মসম্মান বা সেলফ রেসপেক্ট বিয়ের জন্য দম্পতিদের খুলে দেওয়া হবে। রাজ্য সরকারের এ ব্যাপারে কোনও আলাদা ব্যবস্থা না থাকাতেই তাদের এভাবে কাজে নামতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সে রাজ্যের সিপিএম সম্পাদক শান্মুগম। ঘোষণার দিনেই পুদুক্কোট্টাই জেলায় প্রগদীশ্বরন ও ঐশ্বর্যা নামে এক তরুণ-তরুণী সিপিএম অফিসে গিয়ে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
সিপিএম রাজ্য সম্পাদক শান্মুগম এক্স-এ লিখেছেন, “যে সমাজে এখনও ‘সম্মান রক্ষার খুন’ ও জাতিগত নিপীড়ন বিদ্যমান, সেখানে প্রেমের বিবাহ, বিশেষত অসবর্ণ বিবাহ করা দম্পতিদের নিজেদের পরিবার ও সমাজে শত্রুতা সহ্য করতে হয়। যেহেতু তাদের জন্য কোনও নিরাপদ আশ্রয় নেই, তাই আমরা আমাদের সব পার্টি অফিস তাদের জন্য খুলে দিচ্ছি। তারা এখানে আসতে পারবে, সুরক্ষা পাবে এবং আমরা তাদের আইনত বিবাহ নিবন্ধন করতে সাহায্য করব।”
তবে শুধু সিপিএম নয়, বামেদের দেখে এই কাজে এগিয়ে এসেছে বিজেপিও। রবিবারই বিজেপির তামিলনা়ডুর প্রাক্তন সভাপতি কে আন্নামালাই একই ধরনের ঘোষণা করে বলেছেন, বিজেপির অফিসও তরুণ দম্পতিদের জন্য খোলা থাকবে। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “সিপিএম যা বলেছে, তা স্বাগত। কিন্তু শুধু প্রতীকী পদক্ষেপ যথেষ্ট নয়। তামিলনাড়ুর জন্য শক্তিশালী আইন প্রয়োজন। আমরা দাবি করছি, ডিএমকে সরকার যেন সম্মান হত্যার বিরুদ্ধে পৃথক আইন আনে এবং কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করে।”
তবে অসবর্ণ বিয়ে ও অনার কিলিং-এর বিরুদ্ধে সিপিএম ও বিজেপির এই পদক্ষেপ শাসক ডিএমকে-কে কিছুটা চাপেই ফেলেছে। একটি পর্যবেক্ষণ বলছে, ডিএমকে ঐতিহাসিকভাবে অসবর্ণ বিবাহকে সমর্থন করলেও রাজনৈতিক দলগুলির বারবার দাবির পরও সম্মান হত্যার বিরুদ্ধে আলাদা আইন আনতে তারা পিছিয়ে এসেছে।
