সিনেমা জগতে বর্তমানে ধর্ম আর রাজনীতি বড় বিভাজনের কারণ হয়ে উঠেছে। এবার এমনই মন্তব্য করলেন অভিনেতা জন আব্রাহাম। তাঁর মতে, আজকাল কিছু ছবি আছে যেখানে কোনও কারিগরি নেই, কোনো সূক্ষ্মতা নেই, শুধু কিছু টোপ ব্যবহার করে দর্শক টানার চেষ্টা চলছে। এ ধরনের ছবি সমাজে ভয়ের পরিবেশ তৈরি করছে।
জন বলেন, “আমরা এক হাইপার-রাজনৈতিক পরিবেশে বাস করছি, যেখানে ধর্ম আমাদের ভাগ করে দিচ্ছে। এই পরিবেশ মোটেই স্বাস্থ্যকর নয়। কিছু ছবি এই পরিস্থিতির সুযোগ নিচ্ছে এবং বক্স অফিসে সংখ্যার খেলায় নামছে। কিন্তু সেখানে কোনও কারিগরি নেই। এটা সত্যিই ভয়ঙ্কর।”
অভিনেতার মতে, সিনেমা দেশপ্রেমিক হতে পারে, কিন্তু সেটা হওয়া উচিত সংযত ও দায়িত্বশীলভাবে, জিঙ্গোইস্টিক বা অতিরিক্ত আবেগপ্রবণ না হয়ে। তিনি উদাহরণ টেনে বলেন, তাঁর অভিনীত “দ্য ডিপ্লোম্যাট” ছবিতে দেশপ্রেম দেখানো হয়েছে নীরব, সংযমী ও দৃঢ়ভাবে। ছবিতে তিনি কূটনীতিক জে পি সিংহের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। জে পি সিং পাকিস্তান থেকে এক ভারতীয় মহিলাকে উদ্ধার করেছিলেন।
২০০৩ সালের জিসম ছবির মাধ্যমে বলিউডে যাত্রা শুরু করেছিলেন জন। পরে গরম মসলা, দোস্তানা-র মতো কমেডি ছবি করলেও ধীরে ধীরে তিনি ঝুঁকেছেন রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক থ্রিলারের দিকে—যেমন মাদ্রাজ ক্যাফে, পরমাণু এবং দ্য ডিপ্লোম্যাট।
২০১২ সালে প্রযোজক হিসেবে অভিষেক ঘটে জনের, ভিকি ডোনার ছবির মাধ্যমে। এরপর তাঁর বেশিরভাগ কাজই বাস্তব ঘটনার উপর ভিত্তি করে, যেমন শ্রীলঙ্কার গৃহযুদ্ধ ও রাজীব গান্ধীর হত্যাকাণ্ড “মাদ্রাজ ক্যাফে” এবং ১৯৯৮ সালের পোখরান পারমাণবিক বিস্ফোরণ নিয়ে “পরমাণু”।
জন বলেন, “আমার দায়িত্ব হল ভারসাম্যপূর্ণ সিনেমা তৈরি করা। দর্শকরা দীর্ঘ সময় ধরে এমন ছবিকেই মনে রাখবে। সে সিনেমায় শুধু পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে ব্যবসা করার চেষ্টা হয়নি।”
অভিনেতা আরও জানান, বাণিজ্যিক সাফল্যও সম্ভব দায়িত্বশীলভাবে। উদাহরণ হিসেবে তিনি শাহরুখ খানের ‘পাঠান’-এর কথা বলেন, যেখানে তিনি খলনায়কের চরিত্রে ছিলেন। “এই ধরনের ছবিও টাকা আনে। সিস্টেমকে ব্যবহার করে বা সমাজকে বিভাজিত করে টাকা বানানোর দরকার নেই। সেটা ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। আমি জানি সুযোগ থাকলেও আমি তা করব না, কারণ আমি সেভাবে বড় হইনি। একজন দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে বড় হয়েছি। আমি ভুল করতে পারি, তবে আমি চাই বেশি সময় সঠিক থাকতে।”
খলনায়কের চরিত্রে অভিনয় করতেও তিনি ভীষণ পছন্দ করেন। ধূম, শুটআউট অ্যাট ওয়াডালা বা সাম্প্রতিক পাঠান, সব ক্ষেত্রেই তিনি নিজেকে অ্যান্টি-হিরো ভেবে চরিত্রে অভিনয় করেছেন। তাঁর মতে, ৭০-৮০-৯০-এর দশকের প্রচলিত খলনায়কের ধারণা বদলেছে। এখন ধূম-এর মতো ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো খলনায়ককেন্দ্রিক হয়ে উঠছে।
সম্প্রতি জনকে দেখা গেছে ম্যাডক ফিল্মস প্রযোজিত ‘তেহরান’-এ। এটি ইজরায়েল-ইরান দ্বন্দ্বের পটভূমিতে একটি সত্য ঘটনার কাল্পনিক রূপ। ২০১২ সালে দিল্লিতে ইজরায়েলি দূতাবাসের কাছে বিস্ফোরণের ঘটনাই ছবির অনুপ্রেরণা। পরিচালক অরুণ গোপালন পরিচালিত এই ছবিতে জন অভিনয় করেছেন এ সি পি রাজীব কুমারের চরিত্রে, যিনি একটি আন্তর্জাতিক গোপন অভিযানে যুক্ত হন।