মধ্যপ্রদেশের জব্বলপুর হাইকোর্ট এক গুরুত্বপূর্ণ রায়ে জানিয়েছে, প্রাপ্তবয়স্ক কোনও নারীর তাঁর পছন্দের ব্যক্তির সঙ্গে থাকার মৌলিক অধিকার রয়েছে। আদালত স্পষ্ট করে দেয়, কোনও প্রাপ্তবয়স্ক নারীকে তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে বাবা-মার সঙ্গে থাকতে বাধ্য করা যায় না, এমনকি তিনি যদি বিবাহিত পুরুষকেও বেছে নেন।
বিচারপতি অতুল শ্রীধারণ ও বিচারপতি প্রদীপ মিত্তলের ডিভিশন বেঞ্চ রায়ে বলেন, “যদি তিনি ওই ব্যক্তিকে বিয়ে করেন, তবে তা দ্বিতীয় বিবাহের আওতায় পড়তে পারে। এটি একটি কম গুরুত্বপূর্ণ অপরাধ (non-cognizable offence), যেখানে কেবলমাত্র প্রথম স্ত্রী তার স্বামীর বিরুদ্ধে এবং দ্বিতীয় স্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করতে পারেন।”
মামলাটি ছিল এক তরুণীকে ঘিরে, যাকে আদালতের নথিতে ‘X’ নামে উল্লেখ করা হয়েছে। তাঁর বয়স ১৮ বছরের বেশি বলে প্রমাণিত হয়। ওই তরুণী বাড়ি থেকে পালিয়ে নিজের পছন্দের ব্যক্তির সঙ্গে চলে যান। আদালতে উপস্থিত হলে তিনি স্পষ্টভাবে জানান, তিনি তার সঙ্গীকে ছেড়ে বাবা-মার কাছে ফিরতে চান না।
তরুণীর বাবা-মার পক্ষের আইনজীবী আয়ুষ শর্মা যুক্তি দেন যে, যেহেতু ওই পুরুষ ইতিমধ্যে বিবাহিত, তাই ‘X’-কে তাঁর অভিভাবকদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া উচিত। তবে আদালত রায়ে স্পষ্ট করে দেয়, এই মামলায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ‘X’-এর বয়স, এবং প্রাপ্তবয়স্কা হিসেবে তিনি নিজের জীবনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার রাখেন। আদালত মন্তব্য করে, “একজন প্রাপ্তবয়স্ককে পশুর মতো বিবেচনা করা যায় না। তাঁর নিজের ইচ্ছাশক্তি রয়েছে এবং তিনি নিজের সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকারী।”
সরকারের পক্ষে ডেপুটি অ্যাডভোকেট জেনারেল অভিজিৎ আওয়াস্থি আদালতকে জানান, পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, তরুণীর সঙ্গী ইতিমধ্যে তাঁর প্রথম স্ত্রীকে ছেড়ে দিয়েছেন এবং আইনি বিচ্ছেদের প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। এই প্রেক্ষিতে আদালত পর্যবেক্ষণ করে যে, “শুধুমাত্র তিনি বিবাহিত বলেই তরুণীর তার সঙ্গে থাকার ওপর কোনও আইনগত বাধা নেই।”
তবে আদালত একইসঙ্গে স্পষ্ট করে দেয় যে, নৈতিকতার প্রশ্নে আদালতের মন্তব্য করার জায়গা নেই। আদালতের দায়িত্ব কেবল ব্যক্তির আইনি অধিকার সুরক্ষিত রাখা।
রায়ে পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়, গোটেগাঁও (নরসিংহপুর) থানার ডিএসপি মনীশ ত্রিপাঠীর মাধ্যমে ‘X’-কে মুক্তি দিতে। তবে এর আগে দুটি শর্ত পূরণ করতে হবে—প্রথমত, ‘X’ লিখিতভাবে জানাবেন যে তিনি স্বেচ্ছায় ওই ব্যক্তির সঙ্গে থাকতে চান। দ্বিতীয়ত, ওই পুরুষকেও লিখিতভাবে স্বীকার করতে হবে যে তিনি তরুণীকে নিজের সঙ্গে রাখতে রাজি।