বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর নানা রাজ্যে ঘটে চলা হিংসা। আর তা নিয়ে অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগের মাঝেই এবার এক পরিযায়ী শ্রমিকের অকালমৃত্যু। উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়া থানার গোলাম মণ্ডলের অকালমৃত্যুতে বিচারের দাবি তাঁর পরিবারের। মহারাষ্ট্র পুলিশের বিরুদ্ধে উঠেছে নির্যাতনের নালিশ। তৃণমূল কংগ্রেসের এক প্রতিনিধি দল মৃতের পরিবারের সদস্যদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে।
কাজের খোঁজে সেই ২০১৩ সালে মুম্বই পাড়ি দিয়েছিলেন হাবড়া থানার আনোয়ারবেড়িয়া গ্রামের গোলাম মণ্ডল। দীর্ঘ ১৮ বছরেরও বেশি সময় ধরে শ্রমিকের কাজ করেছেন এই বাঙালি পরিযায়ী। কিন্তু সেখানেই সম্প্রতি ‘বাংলাদেশি’ সন্দেহে গভীর রাতে তাকে তুলে নিয়ে যায় মহারাষ্ট্র পুলিশ। কমবেশি ৬ দিন আটকে থাকার পর মেলে মুক্তি। অসুস্থ অবস্থায় বাড়ি ফিরে এসেছিলেন গত ২৬ জুন। শ্বাসকষ্ট ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ধাক্কা আর কাটিয়ে উঠতে পারেননি। যদিও দু-দুবার ভর্তি ছিলেন হাসপাতালে।
গত রবিবার বারাসত জেলা হাসপাতাল থেকে কলকাতার হাসপাতালে নিয়ে আসার পথে মৃত্যু হয় অসুস্থ বছর বাহান্নর গোলাম মণ্ডলের। হাসপাতাল সূত্রে খবর, শ্বাসকষ্টের কারণে মৃত্যু হয়েছে গোলাম মণ্ডলের। মৃতের পরিবারের সদস্যরা জানান, গত ৯ জুন গভীর রাতে পুলিশের একটি দল ঠানে মীরা রোড এলাকায় অস্থায়ী ঝুপড়িতে হানা দিয়ে গোলাম মণ্ডলকে তুলে নিয়ে যায়। অভিযোগ, আধার কার্ড-প্যান কার্ড সহ সমস্ত ভারতীয় পরিচয়পত্র দেখানো সত্ত্বেও তাঁকে ছাড়া হয়নি। বরং বাংলায় কথা বলার কারণে বাংলাদেশি বলে সন্দেহ করে থানায় আটকে রাখে। সেখানে অকথ্য নির্যাতন করার অভিযোগ তুলেছেন মৃতের পরিবারের সদস্যরা।
মুম্বইতে থাকা মৃতের মেয়ে-জামাই দাবি করেছেন, আটক করে নিয়ে যাওয়ার পর থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত শুধুমাত্র কনকনে ঠান্ডা জল, ঠান্ডা সিঙাড়া কিংবা পাউরুটি ছাড়া কিছুই খেতে দেওয়া হয়নি। এর সঙ্গে বাংলাদেশি যোগ জানতে মারধরও করা হয়েছে। গোলাম মণ্ডলের মৃত্যু সংবাদ পেয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছেন ‘দেশ বাঁচাও গণমঞ্চ’-এর পাঁচ সদস্য।
গণমঞ্চের সদস্য সৈকত মিত্র বলেন, “মুম্বই পুলিশের অত্যাচার সহ্য করার পর হাবড়ায় ফিরে এসেছিলেন গোলাম মণ্ডল। সম্প্রতি কলকাতায় প্রেস ক্লাবে তিনি নিজের মুখে তাঁর ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেছেন। আর তার কয়েকদিন পরেই এমন মর্মান্তিক মৃত্যু সংবাদ। এটা মেনে নেওয়া যাচ্ছে না”।
সংগঠনের আর এক সদস্য সুমন ভট্টাচার্যের অভিযোগ, “মুম্বইতে কাজ করতে গিয়ে একজন বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যু হল। এই ঘটনাকে খুন ছাড়া আর কিছু বলা যায় না। তাঁর মৃত্যুর ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। মহারাষ্ট্র পুলিশের বিরুদ্ধেও মামলা দায়ের করা হবে। গোলাম মণ্ডলের ছেলে যাতে এই রাজ্যে একটি সরকারি চাকরি পায়, তার জন্য চেষ্টা চলছে।” মৃত গোলাম মণ্ডলের পরিবারের আশা, রাজ্য সরকার তাঁদের অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়াবে।