ফের কলকাতা হাইকোর্টের ভর্ৎসনার মুখে পড়ল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। পূর্ব মেদিনীপুরের খেজুরির একটি মামলার পরিপ্রেক্ষিতে আদালতের সাফ কথা, সিবিআই এখন গ্যালারি শো করছে। তাই তদন্ত করবে সিআইডি।
পূর্ব মেদিনীপুরের খেজুরিতে ২ বিজেপি কর্মীর অস্বাভাবিক মৃত্যু মামলায় সিবিআই সম্পর্কে এই পর্যবেক্ষণ হাইকোর্টের। সোমবার বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ বলেন,
ডিআইজি পদমর্যাদার একজন আধিকারিকের নেতৃত্বে সিট গঠন করবেন এডিজি সিআইডি। হোমিসাইড শাখার আধিকারিকরাও এই সিটের অন্তর্ভুক্ত থাকবেন।
১১ জুলাই খেজুরিতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখতে গিয়েছিলেন সুজিত দাস নামে এক যুবক এবং বছর ৬৫-র সুধীর পাইক। দুজনেই এলাকায় বিজেপি সমর্থক বলে পরিচিত ছিলেন। জলসা দেখতে গিয়েই তাদের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ। মৃতদেহ উদ্ধারের পর তাম্রলিপ্ত মেডিক্যাল কলেজে ময়নাতদন্তে পাঠায় খেজুরি থানার পুলিশ। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে বলা হয়, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েই তাঁদের মৃত্যু হয়েছে। এলাকার বাসিন্দারাও জানান, ওই দুইজনের উপর হ্যালোজেন খুলে পড়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে তাদের মৃত্যু হয়েছে।
যদিও রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর অভিযোগ, মহরমের জলসা দেখতে যাওয়া ওই দুজনকে পরিকল্পনা করে খুন করা হয়েছে। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হলে শুধু দুজন হিন্দুর কেন মৃত্যু হবে? এই বিষয়টি নিয়ে মামলা হয় কলকাতা হাইকোর্টে।
তাম্রলিপ্ত মেডিক্যাল কলেজের ময়নাতদন্ত রিপোর্ট মানতে অস্বীকার করে মৃতদের পরিবার। তাই হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় দুটি পরিবার। ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্ত হয়। সেই রিপোর্টে বলা হয়, দুজনের দেহে ছিল একাধিক আঘাতের চিহ্ন।
সোমবার রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল শুনানি চলাকালীন ময়নাতদন্তের রিপোর্টে ফারাকের কথাটি স্বীকার করে নেন।
বিচারপতি তখন প্রশ্ন করেন, চিকিৎসকদের মতামতে এত পার্থক্য কেন? এর ফলে তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়ায় বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে। বিচারপতি জানতে চান, জেলার ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা কি অভিজ্ঞ নন? নাকি তাঁদের স্থানীয় ব্যক্তিদের উপর নির্ভর করে রিপোর্ট দিতে হচ্ছে?
অন্যদিকে মামলাকারীদের তরফে বলা হয়, তাঁদের রাজ্য পুলিশের উপর ভরসা নেই। সে কারণেই সিবিআই চাইছেন তাঁরা। এরপর বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ বলেন, এই মামলা এখন সেই পর্যায়ে নেই। সিবিআই এখন গ্যালারি শো করতে ব্যস্ত। প্রয়োজনে তিনি বিষয়টি পরে পুনর্বিবেচনা করবেন। বিচারপতি মৌখিক পর্যবেক্ষণে বলেন, ডিআইজি পদমর্যাদার একজন আধিকারিকের নেতৃত্বে সিট গঠন করবেন এডিজি সিআইডি। হোমিসাইড শাখার আধিকারিকরাও সেই টিমে থাকবেন। বিশেষ তদন্তকারী দল এই দুই জোড়ার মৃত্যুর তদন্ত করবে। এক মাসের মধ্যেই তদন্তের অগ্রগতি রিপোর্ট জমা দিতে হবে। এরপর বিচারপতি ঘোষ জানান, মঙ্গলবার সকালে এই মামলায় তিনি চূড়ান্ত নির্দেশ দেবেন।
