দেশে দ্রুত বাড়তে থাকা স্থূলতার বিরুদ্ধে লড়তে কেন্দ্রীয় সরকার প্রথমবারের মতো “ন্যাশনাল ওবেসিটি গাইডলাইন” তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। সূত্রের খবর, সম্প্রতি এ বিষয়ে প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে ভারতীয় চিকিৎসা গবেষণা পরিষদের (ICMR) ডিরেক্টরের সভাপতিত্বে। বৈঠকে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের আধিকারিক ছাড়াও প্রখ্যাত এন্ডোক্রিনোলজিস্ট, নিউট্রিশনিস্ট, ব্যারিয়াট্রিক সার্জন, ডায়াবেটোলজিস্ট ও অন্য চিকিৎসকরা উপস্থিত ছিলেন।
ভারতে এতদিন স্থূলতা ব্যবস্থাপনায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)-র নির্দেশিকার ওপর নির্ভর করা হত। এবার দেশের বাস্তবতার ভিত্তিতে নিজস্ব গাইডলাইন প্রণয়ন করা হবে। পাশাপাশি একটি জাতীয় ডেটাবেস তৈরি হবে, যা জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষার (NFHS) পরিপূরক হবে। এর মাধ্যমে স্থূলতার কারণ, চিকিৎসা ও প্রতিরোধ কৌশল আরও সুসংহতভাবে নির্ধারণ করা যাবে।
স্বাধীনতা দিবসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি স্থূলতাকে “নীরব সংকট” বলে আখ্যা দেন। তিনি বলেন, “প্রতিটি পরিবার যদি রান্নার তেলে ১০ শতাংশ ব্যবহার কমিয়ে দেয়, তাহলে গোটা দেশের স্বাস্থ্য উপকৃত হবে।”
২০১৮ সালে ICMR টাইপ-২ ডায়াবেটিস ব্যবস্থাপনার জন্য নির্দেশিকা প্রকাশ করেছিল, যেখানে স্থূলতা নিয়ন্ত্রণের সীমিত উল্লেখ ছিল। কিন্তু এবার নতুন গাইডলাইন কেবল চিকিৎসা নয়, বরং প্রতিরোধ, প্রাথমিক হস্তক্ষেপ, স্ক্রিনিং ও ডায়াগনোসিস-এর ওপরও গুরুত্ব দেবে।
বর্তমানে প্রতি চার জন ভারতীয়র মধ্যে একজন স্থূলতায় ভুগছেন। গত এক দশকে এর প্রকোপ তিনগুণ বেড়েছে। NFHS-5 (২০১৯-২১) অনুযায়ী, ২৪% নারী ও ২৩% পুরুষ অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতায় আক্রান্ত। শিশুদের মধ্যেও স্থূলতা বেড়েছে NFHS-4-এর (২.১%) তুলনায় NFHS-5-এ (৩.৪%)।
২০২৩ সালের জুলাইয়ে ‘দ্য ল্যানসেট রিজিওনাল হেলথ, সাউথ এশিয়া’-তে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে, শুধু BMI (বডি মাস ইনডেক্স) দিয়ে স্থূলতার সঠিক মূল্যায়ন সম্ভব নয়। NFHS-5 প্রথমবার কোমরের পরিমাপ যুক্ত করে জানায়, ৪০% নারী ও ১২% পুরুষের পেটের স্থূলতা রয়েছে।
নারীদের ক্ষেত্রে বয়স বাড়ার সঙ্গে ঝুঁকি বাড়ছে। ৩০-৩৯ বছর বয়সে ৪৯.৩% এবং ৪০-৪৯ বছর বয়সে ৫৬.৭%। অথচ BMI অনুসারে মাত্র ২৩% নারী স্থূল হিসেবে গণ্য হন। অর্থাৎ অনেকের “স্বাভাবিক” BMI থাকলেও তাদের পেটে মেদ রয়েছে।
পেটের স্থূলতা সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে কেরল (৬৫.৪%), পঞ্জাব (৬২.৫%), দিল্লি (৫৯%), তামিলনাড়ু (৫৭.৯%) রাজ্যে। সবচেয়ে কম ঝাড়খণ্ড (২৩.৯%) ও মধ্যপ্রদেশ (২৪.৯%) রাজ্যে।
এছাড়া গবেষণায় দেখা গেছে, বয়স্ক, শহুরে, উচ্চ আয়ের মানুষ, আমিষভোজী ও অতিরিক্ত মদ্যপায়ীদের মধ্যে স্থূলতার হার তুলনামূলক বেশি।