ইলেকট্রিকের টেপ জড়ানো টেনিস বল। তাই নিয়ে ব্যাটে-বলের ধুন্ধুমার লড়াই। এমন লড়াই শুধু মাঠেই নয়, চলে অলি-গলিতেও। টেনিস বলের ক্রিকেট বলে ভুল করেন অনেকে। আদতে কিন্তু এটি টেপ বল ক্রিকেট। আর সেই টেপ বল ক্রিকেটই হল. ভারত লাগোয়া দুই রাষ্ট্র পাকিস্তান ও আফিগানিস্তানের ক্রিকেটার তৈরির আঁতুড়ঘর।
পাকিস্তানের ওয়াসিম আক্রাম থেকে শুরু করে ওয়াকার ইউনিস, শোয়েব আখতার, উমর গুল কিংবা মহম্মদ আমিরের মতো কিংবদন্তিরা এই টেপ বল ক্রিকেট থেকেই উঠে এসেছেন। অপ্রচলিত ফর্ম্যাটে, নিজেদের বলের গতি-সুইংকে ঝালিয়ে নিয়ে, আরও উন্নত করেছেন। যার সুবাদে ক্রিকেটের ইতিহাসে তাঁদের কীর্তি চিরকালের জন্য খোদাই করা।
উত্তরসূরিদের সেই ঐতিহ্যকে এখন কিন্তু এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন হ্যারিস রউফ। যিনি ধারাবাহিকভাবে ১৫০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায় বোলিং করতে পারেন করেন। টেপ-বল ক্রিকেট সংস্কৃতিরই অন্যতম ফসল পাক পেসার রউফ।
টেপ-বল ক্রিকেটের সেই অবাক করা দৃষ্টান্ত পৌঁছেছে সীমান্তের ওপারে আফগানিস্তানে। আর সেই কারণেই ১৯৯০ সাল থেকে আফগান মুলুকেও জনপ্রিয় হতে থাকে টেপ বল ক্রিকেট। টেপ বল ক্রিকেটে হাত পাকিয়ে আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক টি -২০ ক্রিকেটে ৬ বলে ৬ ছক্কা হাঁকিয়েছেন আফগান ব্যাটার হযরতুল্লাহ জাজাই। ২০১৯ সালের তাঁর অনন্য কীর্তি টি-২০ ক্রিকেটে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্কোরের মালিক (অপরাজিত ১৬২ রান)। শুধু জাজাই নন, তাজ মালিকও আফগানিস্তানের টেপ -বল ক্রিকেটের ফসল।
টেপ বল ক্রিকেট থেকে উঠে আসা আবদুল্লাহ আহমেদজাই এখন আফগান ক্রিকেটের বোলিং বিভাগের অন্যতম স্তম্ভ। বছর ২২ এর ফাস্ট বোলার ঘণ্টায় ১৪০ থেকে ১৪৫ কিলোমিটার গতিবেগে বল করতে পারেন। আন্তর্জাতিক টি-২০ ক্রিকেটে তাঁর পারফরম্যান্সও নজরকাড়া। ২০২৫ সালে ৪ ম্যাচে ৯ উইকেট তুলেছেন। উইকেট পিছু রান দিয়েছেন গড়ে ৫.৩৩।
জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের সাপ্লাই লাইন হিসেবে পরিচিত টেপ বল ক্রিকেটকে অবশ্য স্বীকৃতি দেয়নি পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড(পিসিবি) কিংবা আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (এসিবি)। স্বীকৃতি পায়নি আইসিসি-কাছেও। তবে তাতে দমে না গিয়ে দুটি দেশই নিজেদের মতো করে তৈরি করে নিয়েছে পিটিসি আর এটিসি। তৈরি হয়ে আইটিসি( ইন্টারন্যাশনাল টেপ বল কাউন্সিল)। একদিকে নিজেদের মধ্যে তারা যেমন ম্যাচ খেলে, তেমনি আগ্রহী অন্যান্য দেশকে নিয়েও আয়োজন করে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ম্যাচ।
ভারতেও কিন্তু কম জনপ্রিয় নয় টেপ বল ক্রিকেট। বিসিসিআই-এর বছরভর নানান টুর্নামেন্টে সেভাবে প্রচার পায় না দেশের টেপ বল টুর্নামেন্ট। বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ক্রীড়া সংগঠনের সঙ্গে টক্কর দেওয়ার মতো রসদও তাদের নেই। তবে মার্কিন মুলুকে অবস্থিত ইন্টারন্যাশনাল টেপ বল কাউন্সিল (ITC) দ্বারা স্বীকৃতি পেয়েছে ভারত। আইটিসি-র সক্রিয় সদস্যদের মধ্যে রয়েছে পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ভারত, শ্রীলঙ্কা এবং বাংলাদেশ।
টেপ বল ক্রিকেটে এশিয়ার সক্রিয় দেশগুলিকে নিয়ে এশিয়া কাপ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে ইন্টারন্যাশনাল টেপ বল কাউন্সিল। আইসিসি কে টক্কর দিতে পরবর্তীতে টেপ বল ক্রিকেটের বিশবকাপ করারও পরিকল্পনা।