রাশিয়া থেকে তেল কেনা চালিয়ে যাওয়ার জের। বিভিন্ন ভারতীয় পণ্যে প্রথমে ২৫ শতাংশ পরে আরও ২৫ অর্থাৎ মোট ৫০ শতাংশ শুল্ক ধার্য করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মাত্রাতিরিক্ত শুল্কের কারণে একাধিক ভারতীয় শিল্প সংস্থা ঝুঁকির মুখে পড়েছে। শুধু তাই নয়, শিল্প সংস্থাগুলি ঝুঁকির মুখে পড়ায় বিপন্ন হতে পারে কর্মসংস্থান, এমনটাই আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।
ইতিমধ্যেই ট্রাম্পের চাপানো মাত্রাতিরিক্ত শুল্কের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে দেশীয় বাজারে। এই ঘটনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে দেশের পোশাক, মূল্যবান পাথর, গয়না, চিংড়ি, কার্পেট ও রত্ন উৎপাদনের মতো একাধিক শিল্প। চড়া শুল্কের কারণে দেশের বস্ত্র ও পোশাক উৎপাদনকারী সংস্থা তাদের উৎপাদন অনেকটাই কমিয়েছে বলে খবর।
ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান এক্সপোর্ট অর্গানাইজেশনের সভাপতি এসসি রালহান জানিয়েছেন, বস্ত্রের উপর আমেরিকা বিপুল পরিমাণ শুল্ক চাপানোর ফলে তিরুপুর, নয়ডা, সুরাটের বস্ত্র উৎপাদন সংস্থাগুলি তাদের উৎপাদন উদ্বেগজনক হারে কমিয়েছে। কারণ শুল্কের জেরে ভিয়েতনাম, বাংলাদেশের মতো সংস্থাগুলির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় এঁটে ওঠা সম্ভব নয়।
মূল্যবান পাথর, গয়না, চিংড়ি, কার্পেট ও অন্যান্য আসবাবপত্র প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলিও বিরাট ক্ষতির আশঙ্কা করছে। ট্রেড থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ-এর আশঙ্কা, ২০২৫-২৬ সালে আমেরিকায় ভারতের পণ্য রফতানি প্রায় ৪৩ শতাংশ কমে ৮৭ বিলিয়ন ডলার থেকে ৪৯.৬ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসতে পারে।
মার্কিন শুল্কে বিপুল ক্ষতির মুখে পড়েছে চিংড়ি রফতানিও। চিংড়ি রফতানিতেও ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন ট্রাম্প। ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে যেখানে ২ বিলিয়ন ডলারের চিংড়ি রফতানি করেছিল ভারত। মার্কিন শুল্ক নীতির জেরে সেই চিংড়ি রফতানি একধাক্কায় অনেকখানি কমবে বলে অনুমান। পেট্রোপণ্যের উপর ৬.৯ শতাংশ শুল্ক চাপানো হয়েছে। অর্গ্যানিক কেমিক্যালের উপর চেপেছে ৫৪ শতাংশ শুল্ক। এই দুই ক্ষেত্রে ২০২৪ সালে ভারত আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্য করেছিল যথাক্রমে ৪.১ ও ২.৭ বিলিয়ন ডলার। কার্পেট শিল্পে আরোপ করা হয়েছে ৫২.৯ শতাংশ শুল্ক। পোশাকের উপর ৬০.৩ থেকে ৬৩.৯ শতাংশ হারে শুল্ক চাপানো হয়েছে। ২০২৪-এ বস্ত্র রফতানি করে ৫.৪ বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা করেছিল ভারত।
হীরে, সোনার গয়না ও মূল্যবান পাথরের উপর ৫২.১ শতাংশ শুল্ক চাপানো হয়েছে। ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম ও তামার উপর ৫১.৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন ট্রাম্প। মেশিনারির উপর চেপেছে ৫১.৩ শতাংশ শুল্ক। গাড়ি ও গাড়ির যন্ত্রাংশে উপর ২৬ শতাংশ এবং আসবাবপত্রের উপর ৫২.৩ শতাংশ শুল্ক চাপানো হয়েছে।
মাত্রাতিরিক্ত শুল্কের কারণে রফতানি কমলে শিল্পসংস্থাগুলিও বাধ্য হবে উৎপাদন কমাতে। আর উৎপাদন কম হলে দেশে কর্মসংস্থানও কমবে বলে আশঙ্কা ব্যবসায়ী মহলের।
Leave a comment
Leave a comment