হিন্দি-চিনি ভাই ভাই ? জার্মান দৈনিক ফ্রাঙ্কফুর্টার অ্যালগেমাইনে জাইটুং (FAZ)-এর প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, সম্প্রতি গত কয়েক সপ্তাহে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অন্তত চারবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু মোদি সেই কল গ্রহণ করেননি। বরং গালওয়ান সংঘর্ষের তিক্ততা ভুলে চীনা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করতে চলেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। পত্রিকাটি জানিয়েছে, এ ঘটনা মোদির “অভ্যন্তরীণ ক্ষোভ ও কূটনৈতিক সতর্কতা-“র প্রতিফলন।
প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যখন একতরফাভাবে ভারতীয় পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন, তখনই এই ফোনালাপের চেষ্টা হয়েছিল। ট্রাম্পের শুল্কনীতির ফলে গত ২৫ বছরে গড়ে ওঠা ভারত-মার্কিন সম্পর্ক বড় ধাক্কা খেয়েছে। পাশাপাশি, রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল কেনার জন্যও ওয়াশিংটন দিল্লির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ করেছে।
ট্রাম্প সম্প্রতি মন্তব্য করেছিলেন, “ভারত ও রাশিয়া চাইলে একসঙ্গে তাদের মৃতপ্রায় অর্থনীতিকে ডুবিয়ে নিতে পারে।” এর জবাবে মোদি ১০ আগস্ট পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ভারত বিশ্বের শীর্ষ তিন অর্থনীতির একটি হওয়ার পথে এগোচ্ছে।
পত্রিকাটি লিখেছে, ট্রাম্পের কৌশল ছিল অন্য দেশগুলোর মার্কিন বাজারের ওপর নির্ভরশীলতাকে কাজে লাগানো। তবে মোদি ট্রাম্পের চাপ উপেক্ষা করে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখেছেন, দেশের অর্থনৈতিক স্বার্থের সঙ্গে আপস না করে।
জার্মান পত্রিকাটি বলছে, মোদির ফোন রিসিভ না করার পেছনে একটি বড় কারণ হল সতর্কতা। উদাহরণ হিসেবে তারা উল্লেখ করেছে, ভিয়েতনামের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘ আলোচনার পর তৈরি হওয়া বাণিজ্য চুক্তি ট্রাম্প মাত্র একটি ফোন কলেই বদলে দেন এবং পরে সামাজিক মাধ্যমে নিজে ঘোষণা করেন যে চুক্তি হয়ে গেছে। “মোদি একই ফাঁদে পা দিতে চান না,” মন্তব্য FAZ-এর।
এদিকে, নিউ ইয়র্কের নিউ স্কুল ইউনিভার্সিটির ভারত-চীন ইনস্টিটিউটের সহ-পরিচালক মার্ক ফ্রেজিয়ার বলেছেন, “আমেরিকার ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল ভেঙে পড়ছে। ভারত কখনই চীনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরাসরি জোটে নামতে চায়নি। মার্কিন শুল্ক আরোপ শুধু নয়, বরং আরও গভীরতর ভূ-রাজনৈতিক কৌশলগত স্বার্থে ভারত এখন চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হচ্ছে।”
FAZ আরও জানিয়েছে, ভারত-পাকিস্তান সামরিক সংঘাতের পর ট্রাম্প একতরফাভাবে দাবি করেছিলেন যে তাঁর মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি হয়েছে, যা ভারতের ক্ষোভ আরও বাড়ায়। পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে ওভাল অফিসে নৈশভোজে আমন্ত্রণ জানানোটিও দিল্লি ‘উস্কানি’ হিসেবে দেখেছে।
এমন প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী মোদি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করতে চলেছেন দীর্ঘ সাত বছর পর। আগামী ৩১শে আগস্ট তিনি সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (SCO)-র সম্মেলনে যোগ দেবেন। সেই সম্মেলন চলাকালীনই দুই দেশের শীর্ষ নেতার পৃথক বৈঠক হবার কথা, যা পর্যবেক্ষকদের মতে যুক্তরাষ্ট্রের পরিবর্তে চীনের দিকে কৌশলগত কারণেই ভারতের হৃদ্যতা বাড়ানোর ইঙ্গিত।
ভারতের বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছিল, মোদি সর্বশেষ ট্রাম্পের অনুরোধেই ১৭ জুন তাঁর সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। প্রায় ৩৫ মিনিটের ওই আলোচনায় কাশ্মীরের সন্ত্রাসবাদী হামলা ও অপারেশন ‘সিন্দূর’-এর বিষয়ে বিস্তারিত জানান।
যদিও বিদেশ মন্ত্রক একাধিকবার স্পষ্ট করে বলেছে, ভারত কখনোই যুক্তরাষ্ট্রকে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক বা যুদ্ধবিরতির বিষয়ে মধ্যস্থতার সুযোগ দেয়নি এবং ভবিষ্যতেও দেবে না।