তিনিই নাকি ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক সংঘাত থামিয়েছেন। ফের দাবি করে বসলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি আবারও দাবি করলেন যে, দু’দেশকে পারমাণবিক যুদ্ধের হাত থেকে রক্ষা করেছেন তিনিই।
ট্রাম্পের কথায়, পহেলগাঁও সন্ত্রাসবাদী হামলার পর টানা চার দিন ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সংঘর্ষ চলছিল। সেই সময় তিনি নিজে হস্তক্ষেপ করেন। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “আমি দেখলাম ভারত-পাকিস্তান লড়াই করছে। আমি দেখলাম সাতটা বা তারও বেশি যুদ্ধবিমান ধ্বংস হল। আমি বললাম, এটা ভালো নয়, অনেকগুলো জেট নষ্ট হয়ে গেছে।”
ট্রাম্প দাবি করেন, তিনি সরাসরি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চাপ দিয়েছিলেন পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি করতে। নইলে আমেরিকা ভারতের ওপর কঠোর শুল্ক বসাবে বলে সতর্ক করেছিলেন তিনি।
প্রেসিডেন্টের ভাষায়, “আমি মোদিজিকে বললাম, আপনাদের আর পাকিস্তানের মধ্যে এত ঘৃণা কেন? আমি যদি না থামাতাম, তবে আপনারা পারমাণবিক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তেন। আমি স্পষ্ট জানালাম, যদি যুদ্ধ চলতে থাকে তবে আমরা কোনো বাণিজ্য চুক্তি করব না, বরং এমন শুল্ক বসাব যে মাথা ঘুরে যাবে।”
ট্রাম্প আরও বলেন, তার সতর্কবার্তার পর দ্রুতই ফল পাওয়া যায়। “আমি কথা বলার পাঁচ ঘণ্টার মধ্যেই কাজ শেষ হয়ে গিয়েছিল,” তিনি দাবি করেন। তবে তিনি সতর্ক করে দেন, ভবিষ্যতে আবার উত্তেজনা দেখা দিলে তিনি প্রয়োজনে ফের হস্তক্ষেপ করবেন। “হয়তো আবার শুরু হবে, জানি না। তবে হলে আমি থামিয়ে দেব। এমনটা চলতে দেওয়া যায় না।”
গত ১০ মে ট্রাম্প সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রাম্প ঘোষণা করেছিলেন যে, আমেরিকার মধ্যস্থতায় ভারত ও পাকিস্তান পূর্ণ যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে। তারপর থেকেই তিনি দাবি করে আসছেন, চার দিনের সংঘাত শেষ করেছেন একাই।
কিন্তু ভারত সরকার বারবার জানিয়ে এসেছে, যুদ্ধবিরতির বিষয়টি সরাসরি দুই দেশের সেনাবাহিনীর ডিরেক্টর জেনারেল অফ মিলিটারি অপারেশনস (DGMOs)-এর মধ্যে বৈঠকেই ঠিক হয়েছিল, কোনও বিদেশি হস্তক্ষেপ ছাড়াই।
এদিকে মার্কিন প্রশাসন নতুন করে ভারতকে অর্থনৈতিক চাপে ফেলতে চলেছে। ট্রাম্প প্রশাসনের প্রকাশিত খসড়া নোটিসে বলা হয়েছে, ভারতীয় পণ্যে ৫০ শতাংশ শুল্ক বসানো হবে। মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের প্রকাশিত খসড়া অনুযায়ী, ২০২৫ সালের ২৭ আগস্ট থেকে এই উচ্চ শুল্ক কার্যকর হবে। এর কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, ভারত এখনও রাশিয়ার কাছ থেকে অপরিশোধিত তেল কিনছে।
এই বিষয়ে জবাব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মঙ্গলবার আহমেদাবাদে এক জনসভায় তিনি বলেন, “চাপ বাড়তে পারে, কিন্তু ভারত মাথা নত করবে না। কৃষক, পশুপালক আর ক্ষুদ্র ব্যবসার স্বার্থ আমার কাছে সবার আগে।” তিনি দেশবাসীকে দেশীয় পণ্যের ওপর আরও নির্ভরশীল হওয়ার আহ্বান জানান।
যদিও শুল্ক ইস্যুতে উত্তেজনা বাড়ছে, তবুও কূটনৈতিক পর্যায়ে সংলাপ চালিয়ে যাচ্ছে দুই দেশ। সোমবার ভারত-আমেরিকা ভার্চুয়াল ২+২ অন্তর্বর্তীকালীন বৈঠক করেছে। এই বৈঠকে প্রতিরক্ষা, বাণিজ্য, জ্বালানি, গুরুত্বপূর্ণ খনিজ অনুসন্ধান এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা বিষয়ে আলোচনা হয়। এভাবে ট্রাম্পের বিস্ফোরক দাবি, আমেরিকার নতুন শুল্ক পরিকল্পনা এবং ভারতের পাল্টা জবাবে ফের একবার আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অঙ্গনে ভারত-মার্কিন টানাপোড়েন প্রকাশ্যে চলে এল।