ভারতীয়দের জন্য এবার স্বপ্নের দেশ সুইজারল্যান্ডে বসবাস, ব্যবসা শুরু করা ও কাজ করার সুযোগ এনে দিয়েছে বিশেষ ‘গোল্ডেন ভিসা প্রোগ্রাম’। ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের নাগরিকদের জন্য তৈরি এই রেসিডেন্সি-বাই-ইনভেস্টমেন্ট প্রকল্পে এখন আবেদন করতে পারবেন ভারতীয়রাও।
কী এই সুইস গোল্ডেন ভিসা?
এটি এমন একটি বিশেষ ভিসা যেখানে নির্দিষ্ট আর্থিক বিনিয়োগের বিনিময়ে আবেদনকারীরা সুইজারল্যান্ডে বসবাসের অধিকার পান। শুধু কাগজপত্র নয়, বরং এই উদ্যোগ সুইজারল্যান্ডের বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ এবং বহুমুখী সংস্কৃতি গড়ে তোলার কৌশলের অংশ।
কেন ভারতীয়দের কাছে আকর্ষণীয়?
এই ভিসার মাধ্যমে সুইজারল্যান্ডে ব্যবসা শুরু বা কর্পোরেট দুনিয়ায় কাজের সুযোগ পাওয়া যায়। শেঙ্গেন ভিসা সুবিধার মতো গোটা ইউরোপ জুড়ে সহজে যাতায়াত করা সম্ভব।
এছাড়া পরিবার নিয়ে নিরাপদে বসবাসের সুযোগ, উন্নত স্বাস্থ্যব্যবস্থা, সেরা মানের শিক্ষা, সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশ ও নির্ভরযোগ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণে দেশটি ভারতীয়দের কাছে বিশেষভাবে আকর্ষণীয়।
বিভিন্ন ক্যান্টনে আকর্ষণীয় ট্যাক্স স্কিম রয়েছে, বিশেষ করে লাম্প সাম ট্যাক্স ব্যবস্থা। একই সঙ্গে সঙ্গী ও ১৮ বছরের নিচে সন্তানরাও এই ভিসায় অন্তর্ভুক্ত হয়।
যোগ্যতা
এই ভিসার জন্য ভারতীয় আবেদনকারীদের বয়স হতে হবে ১৮ থেকে ৫৫ বছরের মধ্যে। কোনও অপরাধমূলক রেকর্ড থাকা চলবে না।
আবেদনকারীর বৈধ আয়ের উৎস থাকতে হবে এবং শারীরিকভাবে সুস্থ হতে হবে। এছাড়া সুইজারল্যান্ডে একটি বাড়ি ভাড়া নিতে হবে অথবা কিনতে হবে।
ভিসা পাওয়ার দুইটি প্রধান পথ
১. Lump Sum Tax Agreement (বার্ষিক ট্যাক্স প্রদান স্কিম)
এখানে বছরে ন্যূনতম CHF 200,000 (প্রায় ₹২.১৭ কোটি) ট্যাক্স দিতে হয়। সর্বোচ্চ ট্যাক্স হতে পারে CHF 600,000 (প্রায় ₹৬.৫ কোটি), নির্ভর করে কোন ক্যান্টনে থাকছেন তার ওপর। এই রুটে চাকরি করা যায় না, তবে পূর্ণ বসবাসের অধিকার পাওয়া যায়।
২. Entrepreneurial Investor Scheme (ব্যবসায়ী বিনিয়োগকারীর স্কিম)
অন্তত CHF 1 মিলিয়ন অর্থাৎ প্রায় ৯.৬ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে হয়। নতুন কোম্পানি খোলা বা বিদ্যমান কোনো সুইস কোম্পানিতে বিনিয়োগের সুযোগ থাকে। ভারতীয় উদ্যোক্তাদের জন্য এই পথটি বিশেষভাবে জনপ্রিয়।
প্রক্রিয়া
সব ঠিক সকলে পুরো প্রক্রিয়াটি সাধারণত ৫ মাসের মধ্যে শেষ হয়। ধাপগুলো হল—
১. বিনিয়োগের পথ বেছে নেওয়া (লাম্প সাম ট্যাক্স বা ব্যবসায়ী স্কিম)
২. সুইস কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ও নথি যাচাই
৩. D ভিসার জন্য আবেদন (ব্যাংক স্টেটমেন্ট, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স, স্বাস্থ্যবীমা জমা দিতে হয়)
৪. সুইজারল্যান্ডে গিয়ে বসতি গড়ে তোলা
৫. ১০ বছর পর স্থায়ী বসবাসের সুযোগ এবং ১২ বছর পর নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করা যায়
সুইজারল্যান্ডের গোল্ডেন ভিসায় সরাসরি পাসপোর্ট মেলে না। প্রথমে অস্থায়ী রেসিডেন্সি পাওয়া যায়। এরপর ১০ বছর পর স্থায়ী রেসিডেন্সির সুযোগ মেলে এবং ১২ বছর পর নাগরিকত্বের আবেদন করা যায়। সুইস পাসপোর্ট বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী পাসপোর্ট হিসেবে পরিচিত। তাই এই দীর্ঘ অপেক্ষা অনেকের কাছে সার্থক বিনিয়োগ।
এটি শুধু অভিবাসন নয়, বরং ভারতীয় ব্যবসায়ী ও ধনী পরিবারগুলির জন্য ভবিষ্যত সুরক্ষার উপায়। ইউরোপে ব্যবসার বিস্তার, নিরাপদ জীবনযাত্রা ও পরবর্তী প্রজন্মের সুযোগ সুনিশ্চিত করতে সুইস গোল্ডেন ভিসা হয়ে উঠছে বড় আকর্ষণ।