কাজী গোলাম গউস সিদ্দিকী
দেশ স্বাধীন হলে বাংলার জাতীয় কবি হবেন কাজি নজরুল ইসলাম। হ্যাঁ, নেতাজির ভবিষ্যৎ বাণীকে সত্য প্রমানিত করে নজরুল, বাংলাদেশের জাতীয় কবির মর্যাদা পেয়েছেন।
১৯২৯ সালের ১৫ ডিসেম্বর অ্যালবার্ট হলে( যা, আজকের কলেজ স্ট্রিটের কফি হাউস) নজরুলের সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানে নেতাজি নজরুল সম্পর্কে ওই মন্তব্য করেন। সেই সঙ্গে তিনি কবিকে ” জ্যান্ত মানুষ” বলে আখ্যায়িত করেন।
আজ সেই “জ্যান্ত মানুষ” এর ৫০ তম মৃত্যু দিন। তাও হয়তো তাঁর ১২৫ তম জন্মবর্ষের মতো নিরবে জনান্তিকে পেরিয়ে যাবে। ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট ঢাকার পিজি হাসপাতালে তিনি প্রয়াত হন।
নজরুলের সঙ্গে নেতাজির প্রথম দেখা হয় ঢাকাতে। তার পর একাধিকবার তাঁদের দেখা হয়েছে। নজরুলের প্রতি ও নজরুলের নেতাজির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সম্পর্ক ছিল। নেতাজি নজরুলকে শুধু জীবন্ত মানুষ বলেই খান্ত থাকেননি। বরং ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে তাঁর অবদানের কথা দেশ স্বাধীন হওয়ার ১৮ বছর আগেই জানিয়ে দিয়েছেন, নিজে একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী হিসাবে। তাই তিনি কোনও কপটতা না করে বলেছেন, “আমরা যখন যুদ্ধে যাব তখন সেখানে নজরুলের যুদ্ধের গান গাওয়া হবে। আমরা যখন কারাগারে যাব, তখনও তার গান গাইব।”
এ হেন কবির জন্ম-মৃত্যু দিন আসে ও চলে যায়। যেমন আজ তাঁর মৃত্যু দিন। ক’জন মনে রেখেছেন। শুধু তাই বা বলি কেন? তাঁর আসল স্বদেশে নজরুল চর্চা আজ তেমন চোখে পড়ে না। তবে হ্যাঁ, যে কোনও সঙ্কটে বাঙালির নিজস্ব আশ্রয় যেমন রবীন্দ্রনাথ, তেমনই বিশেষ বিশেষ সঙ্কটের সময় ইদানিং কালের ফেসবুকে নজরুলের ” কোটেশন ” উদ্ধৃত হতে দেখে মনে হয়, ভুলে গেলেও নজরুল বিস্মৃতির অতল গভীরে হারিয়ে যাননি। তাই, রাজনীতির প্রয়োজনে কিছুদিন আগেও স্বংয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও নজরুলকে “কোট” করতে দ্বিধা করেন না। অন্য রাজনৈতিক দলগুলি যারা বাংলায় রাজনীতি করে তারা অবশ্য প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে আমাদের মনিষীদের নাম, তাদের উক্তি ব্যবহার করেন নিয়ম করে, তাতে নজরুলও ঠাঁই পান। এ পর্যন্তই নজরুলের পাওনা। তাই, আজও আমাদের রাজ্যে নজরুল গবেষণা কেন্দ্র ও তাঁর সৃষ্টি সংরক্ষণের কোনও প্রচেষ্টা চোখে পড়ে না।