রাশিয়া থেকে তেল কেনার জন্য ভারতের উপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে আমেরিকা। মার্কিন শুল্কের কোপে পড়েছে ভারতের চর্মশিল্প। তবে আমেরিকার শুল্ক নিয়ে ততটা উদ্বিগ্ন নয় কলকাতায় চর্মশিল্পের সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলি। তাদের আশঙ্কা অন্য এক জায়গায়। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভুক্ত দেশগুলি যাতে ভারতের উপর শুল্কের বোঝা চাপায় তার জন্য জোরদার সওয়াল করেছেন ট্রাম্প। যা নিয়ে উদ্বেগ ছড়িয়েছে কলকাতার চর্ম শিল্পমহলে।
জানা গিয়েছে, ভারত প্রতিবছর আমেরিকায় প্রায় ১১০০ কোটি ডলার মূল্যের চর্মজাত দ্রব্য রফতানি করে। তুলনায় ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বছরে ভারতের রফতানির পরিমাণ এর প্রায় চার গুণ। ইউরোপীয় দেশগুলিতে ভারত প্রতিবছর ৪০৫০ কোটি ডলারেরও বেশি চামড়াজাত পণ্য রফতানি করে থাকে।
অল ইন্ডিয়া লেদার এক্সপোর্ট সেন্টারের ভাইস চেয়ারম্যান রমেশ জুনেজা বলেছেন, “চর্মজাত দ্রব্যের উপর আমেরিকা ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপানোয় তাঁরা খুব একটা উদ্বিগ্ন নন। কিন্তু যদি এই একই হারে ইউরোপীয় ইউনিয়ন শুল্ক চাপায় তবে ভারতীয় চর্মশিল্প চরম সঙ্কটে পড়বে। এক্ষেত্রে আমেরিকার চাপ ইউরোপীয় দেশগুলি কতটা সহ্য করতে পারবে তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।”
এক পরিসংখ্যান থেকে জানা গিয়েছে, ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে আমেরিকায় ৫০ হাজার কোটি টাকা মূল্যের জুতো-সহ বিভিন্ন চর্মজাত দ্রব্য রফতানি করা হয়েছিল। ভারত আমেরিকাতেই সবচেয়ে বেশি চর্মজাত দ্রব্য রফতানি করে থাকে। ভারতীয় চর্মজাত পণ্য রফতানির প্রায় ২০ শতাংশই প্রতিবছর আমেরিকায় পাঠানো হয়। এর পরে রয়েছে যথাক্রমে জার্মানি ও ব্রিটেন। ওই পরিসংখ্যান থেকে আরও জানা গিয়েছে ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে কলকাতা থেকে প্রায় ৬৭৫০ কোটি টাকার চর্মজাত জিনিস বিদেশে পাঠানো হয়েছে।
কলকাতার পাশাপাশি প্রতিবছর উত্তরপ্রদেশের কানপুর এবং চেন্নাই থেকেও বিপুল পরিমাণ চর্মজাত পণ্য রফতানি করা হয়ে থাকে। ইউরোপের বাজারে ভারতের ক্রেতাদের মধ্যে রয়েছে জার্মানি, ইতালি, ফ্রান্স, স্পেন এবং নেদারল্যান্ডস। ইউরোপীয় দেশগুলি যদি চর্মজাত পণ্যের উপর চড়া শুল্ক ধার্য করে সেক্ষেত্রে রফতানি ধাক্কা খাবে বলে আশঙ্কা। যা ভারতীয় চর্ম শিল্পের উপর একটা বড় আঘাত হতে পারে। এই শিল্পের সঙ্গে দেশে ২ লক্ষেরও বেশি মানুষের জীবন-জীবিকা জড়িত। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলি যদি ভারতীয় পণ্যে বাড়তি শুল্ক আরোপ করে সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম এবং ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অনেকটাই পিছিয়ে পড়বে বলে এই শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের আশঙ্কা।