ধর্মতলা-শিয়ালদহ কবে জুড়বে? কিছুদিন আগেও অফিসযাত্রীদের আলোচনায় ঘুরেফিরে আসছিল এই প্রশ্ন। উত্তর মিলে গেছে। তবে শুরু হয়েছে নতুন সমস্যা। ভিড়ের চাপে নাভিশ্বাস।
মেট্রোয় কর্মী নিয়োগ দীর্ঘদিন বন্ধ। সে কারণেই বদলি নীতির পথে হাঁটতে হচ্ছে মেট্রোকে। যেখান থেকে বদলি করছে, সেখানে সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। পরিস্থিতি ভয়াবহ। কারণ, পুরোদমে শুরু হয়ে গেছে পরিষেবা। হাওড়া থেকে সোজা মাত্র আধ ঘণ্টাতেই পৌঁছে যাওয়া যাচ্ছে সেক্টর ফাইভ। শিয়ালদহ তো মাত্র ১১ মিনিটে। সেক্টর ফাইভে প্রচুর অফিস। আইটি থেকে মিডিয়া, অফিসযাত্রীদের বড় অংশ মেট্রো ধরছেন। সেক্টর ফাইভে নেমে নিউটাউন, রাজারহাটেও পৌঁছে যাচ্ছেন তাঁরা।
ফলে ভিড় হচ্ছে দেদার। মেট্রোর হিসাব, গত শুক্রবার উদ্বোধনের পর প্রথম দিনেই প্রায় ৩৫ লাখ টাকার টিকিট বিক্রি হয়েছে। বিমানবন্দর পর্যন্তও নতুন পরিষেবা চালু হয়েছে। পাশাপাশি রুবি থেকে জুড়ে গেছে বেলেঘাটা।
সামনে পুজো। একমাসও বাকি নেই। ফলে পুজোর মার্কেটিংয়ে বাস, অটোর ভিড়ের ছবিটা বদলাতে শুরু করেছে। কিন্তু এ কদিনেই নতুন চিন্তা দানা বাঁধতে শুরু করেছে, সিঁদুরে মেঘ দেখতে শুরু করেছেন মেট্রোর কর্মীরা। পরিষেবা সামাল দেওয়া যাবে তো? পুজোর মুখে বড়সড় কোনও সঙ্কটে পড়বে না তো কলকাতা মেট্রো? চিন্তা বাড়াচ্ছে কর্মী সঙ্কট। এক করিডর থেকে অন্য করিডরে বারবার কর্মী বদলি করতে হচ্ছে পরিষেবা সামাল দেওয়ার জন্য। তবে কলকাতা মেট্রোর জেনারেল ম্যানেজার পি উদয়কুমার রেড্ডি বলছেন, কোনও বদলি হচ্ছে না। কোনও সমস্যা নেই। পরিষেবা স্বাভাবিক।
সূত্রের খবর, নোয়াপাড়া-কলকাতা বিমানবন্দর মেট্রো রুটের চারটি স্টেশন পরিচালনার অনেক কর্মীর বদলি হয়েছে। শহরের অন্যান্য মেট্রো স্টেশন থেকে আগেই ২৭ জন আধিকারিককে বদলি করা হয়েছে। দু’দফায় বদলি হয়েছে রুবি-বেলেঘাটা এবং নোয়াপাড়া-বিমানবন্দর মেট্রোতে। বিভিন্ন স্টেশনের জন্য আরও প্রায় ৪০ জনকে বদলি করা হয়েছে। কর্মী নিয়ে বাড়ছে উদ্বেগ।
সূত্রের খবর, ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর এসপ্ল্যানেড স্টেশনে দু’টি শিফট চলছে ৮ জন কর্মীর ভরসায়। এদিকে পরিষেবা আগের থেকে আরও গতিতে চলছে। বেড়েছে মেট্রোর সংখ্যা। কর্মীদের উপর বাড়ছে চাপ। শিয়ালদহ স্টেশনে দৈনিক দেড় লক্ষ যাত্রী বাড়তে পারে বলে মনে করছেন কলকাতা মেট্রোর কর্তারা। কিন্তু দুই শিফট মিলিয়ে ওই স্টেশন চলছে মাত্র ১৮ জন কর্মীর ভরসায়। পুজোয় আবার রাতভর মেট্রো চলে। এ অবস্থায় পরিস্থিতি হাতের বাইরে বেরিয়ে যাবে না তো?
এই মুহূর্তে মোটরম্যান ৫০০-র বেশি থাকার কথা। সেটা আড়াইশোর কাছাকাছি আছে। অর্থাৎ ৫০ শতাংশ কম। ট্র্যাফিকের ক্ষেত্রে এখনও ৬০০ প্লাস ভ্যাকেন্সি। যাঁরা আছেন, তাঁদের বাড়তি পরিশ্রম করতে হচ্ছে। ঠিকমতো বিশ্রামটুকু পাচ্ছেন না। উল্টে জনগণের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। পান থেকে চুন খসলে লাগাতার গালমন্দ তো আছেই।
টানাপোড়েন চলছে পুরোদমে। কয়েকদিন আগেই দফায় দফায় টালিগঞ্জ মেট্রোতে রেক চলাচলে সমস্যা দেখা দিয়েছিল। কার্যত মেট্রোর জ্যাম লেগে গিয়েছিল। তা মিটেছে। কিন্তু এখন নতুন রুটগুলিতে যে পরিমাণ ভিড় বাড়ছে, তা ঠিকমতো সামাল দেওয়া যাবে তো? ঠিক মতো পরিষেবা মিলবে তো আগামীতে? পুরাতন লাইনে মাঝে মাঝেই ত্রাহি রব উঠছে। ভিড়ের চাপে কখনও দরজা বন্ধ হচ্ছে না। কখনও মেট্রো রেক বিগড়োচ্ছে।
পুজো যে মেট্রোর কাছে বড় চ্যালেঞ্জ তা বলছেন যাত্রীরাই। যদিও এরই মধ্যে মেট্রোর জেনারেল ম্যানেজার এখনও ক্ষোভ প্রকাশ করে চলেছেন চিংড়িঘাটার কাজ থমকে যাওয়া নিয়ে। তাঁর সাফ কথা, সবটাই রাজ্যের হাতে। এখন দেখার জল শেষ পর্যন্ত কতদূর গড়ায়।