এশিয়া কাপ শুরুর ১০ দিন আগে আসন্ন প্রতিযোগিতাটি বয়কটের দাবি তুললেন ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেটার মনোজ তিওয়ারি। এর আগে পহেলগাঁওয়ের ঘটনার প্রতিবাদে এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে খেলা নিয়ে বিসিসিআই এবং কেন্দ্রকে তুলোধোনা করেছিলেন সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ অভিষেক বন্দোপাধ্যায়। এবার একই সুর শোনা গেল বাংলার ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মনোজের মুখেও।
তবে তিনি শুধু আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ম্যাচটিই নয়, বরং গোটা প্রতিযোগিতাটিই বয়কটের ডাক দিয়েছেন।
গত ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসবাদী হামলায় নিহত হন ২৬ জন নিরীহ মানুষ। যার জবাব গত ৭ মে অপারেশন সিঁদুরের মাধ্যমে দেয় ভারত। এর পরই দু’দেশের সম্পর্ক একেবারে তলানিতে পৌঁছেছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে কিছুদিন আগেই ইংল্যান্ডে আয়োজিত ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ অব লেজেন্ডস প্রতিযোগিতায় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দুটি ম্যাচ বয়কট করেছিলেন শিখর ধাওয়ান, হরভজন সিংরা। টুর্নামেন্ট থেকে কার্যত নামই প্রত্যাহার করে নেয় ভারতের দলটি।
মনোজ তিওয়ারির দাবি, আসন্ন এশিয়া কাপেও একই পথে হাঁটা উচিত ছিল ভারতীয় বোর্ডের।
সাম্প্রতিক একটি সাক্ষাৎকারে গোটা এশিয়া কাপ বয়কটের ডাক দিয়ে মনোজ বলেন, “দেখুন, প্রথমতঃ আমি ব্যক্তিগতভাবে এশিয়া কাপ বয়কট করছি। আমি এই প্রতিযোগিতা দেখব না। আর আমি জানি না, স্কোয়াডে কে কে রয়েছেন। এর থেকে বিস্তারিত কিছু বলতে চাই না। যেমনটা আগেই বলেছি, আমি ব্যক্তিগতভাবে প্রতিযোগিতাটি বয়কট করছি। কারণ, পহেলগাঁওয়ের ঘটনায় অনেক মানুষ মারা গিয়েছেন। তা ছাড়া এর আগেও আমরা অনেক কিছু দেখেছি। আর সেই পরিবেশেই এশিয়া কাপ হচ্ছে।”
তিনি আরও যোগ করেন, “পুলওয়ামাতেও একই ঘটনা ঘটেছিল। এই ধরণের ঘটনা যদি ঘটতেই থাকে তা হলে কীভাবে আমরা খেলা উপভোগ করব? এটা আমার বোঝার বাইরে। তাই ব্যক্তিগতভাবে এটা (এশিয়া কাপ) বয়কট করছি আমি।”
এর পাশাপাশি বাংলার প্রাক্তন অধিনায়ক এও প্রশ্ন তুলেছেন, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে খেলে ভারত কি সত্যিই লাভবান হবে? বরং এই খেলা বয়কট করে বাকি ম্যাচগুলি খেললে একটি জোরালো বার্তা পাঠানো হবে বলে মত মনোজের।
তাঁর কথায়, “কী লাভ খেলে? তোমাকে টিআরপি পেতে হবে? তোমার রাজস্বের প্রয়োজন? যদি আইসিসি ওদের বাদ দিতে না পারে, তা হলে তুমিই ওই ম্যাচ থেকে সরে দাঁড়াও। অন্যান্য ম্যাচে ভাল খেলে দেখিয়ে দাও। তার পর দেখো, কী হয়। এটা আমাদের দেশের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি হবে।”
এই প্রসঙ্গে পাকিস্তান সরকারকেও বিঁধেছেন মনোজ। সেই সঙ্গে তুলে ধরেছেন সেনাবাহিনী এবং পহেলগাঁওয়ে নিহতদের পরিবারের কথাও। যে কথা শোনা গিয়েছিল অভিষেকের মুখেও।
তিনি বলেন, “যখন আমরা জানি যে এই সন্ত্রাসীরা আমাদের প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান থেকে আসছে। আর পাকিস্তান সরকার কখনওই তাদের দেশে বেড়ে ওঠা সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলিকে নির্মূল করার প্রচেষ্টা করেনি। যখন আমরা এটা দেখতেই পাচ্ছি, তখন স্পষ্টতই পাকিস্তানের সঙ্গে খেলার অর্থ কী? আমার মতে, আমাদের খেলা উচিত নয়। কেন? কারণ মাত্র কয়েক মাস আগে পহেলগাঁওয়ে হামলার ঘটনা ঘটেছিল। তার আগে পুলওয়ামায় ঘটেছিল একই ঘটনা। তা হলে বুঝতেই পারছেন, যে সব পরিবার তাদের সদস্যদের হারিয়েছে, তারা কোন মানসিক অবস্থার মধ্যে থাকবে? দেশের জন্য একজন সৈনিক তার নিজের জীবন উৎসর্গ করে। আর যে দেশ থেকে সন্ত্রাসবাদীরা আসছে, সেই দেশের বিরুদ্ধেই আমরা ক্রীড়া অনুরাগের নামে খেলি। এটা হওয়া উচিত নয়।”