তিনি কোথায় ? কেন পদত্যাগ করলেন ? এই নিয়ে প্রবল হইচই। স্বাস্থ্যের কারণেই পদত্যাগ করেছেন, নাকি সরকারের চাপে ? এখন তিনি কোথায়, বাড়িতে নাকি হাসপাতালে ? তাঁকে নিয়ে বিরোধীদের প্রবল জল্পনার মধ্যেই হঠাৎ প্রকাশ্যে এল তাঁর একটি আবেদন।
বিধায়ক হিসেবে তাঁর প্রাপ্য পেনশন দাবি করে রাজস্থান বিধানসভায় চিঠি লিখেছেন প্রাক্তন উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়।
রাজনৈতিক কেরিয়ারের শুরুতে রাজস্থানের বিধায়ক হিসেবে তিনি তাঁর প্রাপ্য পেনশন দাবি করেছেন। পরবর্তীকালে সাংসদ, পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল বা তারপরে উপরাষ্ট্রপতি হিসেবে নয়, বিধায়ক হিসেবে।
এই চিঠি পাওয়ার পর শনিবার রাজস্থান বিধানসভার সচিবালয় জানিয়েছে, তাঁর আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে এবং পদত্যাগপত্র গৃহীত হওয়ার দিন থেকে পেনশনের সুবিধা শুরু হবে।
ধনখড় ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত রাজস্থানের কিষানগড় বিধানসভা কেন্দ্র থেকে কংগ্রেসের বিধায়ক ছিলেন। সেই সময় তিনি বিধায়ক পেনশন পেতেন। তবে ২০১৯ সালের জুলাই মাসে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল নিযুক্ত হওয়ার পর সেই সুবিধা বন্ধ হয়ে যায়। তারপর বিজেপি তাঁকে উপরাষ্ট্রপতি পদে মনোনীত করে। বিরোধী প্রার্থী মার্গারেট আলভাকে হারিয়ে ২০২২ সালে তিনি উপরাষ্ট্রপতি পদে বসেন। কিন্তু মেয়াদ শেষের প্রায় দু’বছর আগেই তাঁর হঠাৎ পদত্যাগ আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে।
গত ২১ জুলাই, সংসদের বাদল অধিবেশনের প্রথম দিন রাজ্যসভা পরিচালনা করার পর হঠাৎ রাত্রে তিনি উপরাষ্ট্রপতির পদ থেকে ইস্তফা দেন। রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো চিঠিতে স্বাস্থ্যগত কারণ উল্লেখ করলেও আসল কারণ নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়।
রাজস্থানে এক মেয়াদের প্রাক্তন বিধায়ক প্রতি মাসে ৩৫ হাজার টাকা পেনশন পান। ৭০ বছরের ঊর্ধ্বে হলে আরও ২০ শতাংশ বাড়তি সুবিধা মেলে। বর্তমানে ৭৪ বছর বয়স হওয়ায় ধনখড় মাসিক ৪২ হাজার টাকার যোগ্য।
এছাড়া, এক মেয়াদের প্রাক্তন লোকসভা সাংসদ হিসেবে তিনি মাসিক ৪৫ হাজার টাকা পাওয়ার যোগ্য। প্রাক্তন উপরাষ্ট্রপতি হিসেবে তিনি প্রায় ২ লক্ষ টাকা ভাতা, সঙ্গে সরকারি বাড়ি, কর্মী ও চিকিৎসা সুবিধা পেতে পারেন। তবে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল থাকাকালীন তিনি কোনও পেনশনের যোগ্য নন, শুধু ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত সচিবালয় সহায়তার খরচ ফেরত দাবি করতে পারেন।
ধনখড়ের আকস্মিক পদত্যাগ ঘিরে রাজনৈতিক জল্পনা অব্যাহত। বর্ষা অধিবেশনের প্রথম দিন তিনি স্বাস্থ্যগত কারণে ইস্তফা দিয়েছিলেন। কংগ্রেস এই সিদ্ধান্তকে “সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত” বলে মন্তব্য করেছে।
কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ দাবি করেছেন, স্বাস্থ্যগত কারণের বাইরে আরও গভীর কারণ রয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, ২১ জুলাই দুপুরে ধনখড় রাজ্যসভার বিজনেস অ্যাডভাইসরি কমিটির বৈঠকও করেন যেখানে বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডা ও সংসদীয় বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ধনখড়ের পদত্যাগ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে বলেন, “তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ মানুষ, আমার মনে হয় তাঁর স্বাস্থ্যে কোনও সমস্যা নেই।”
জল্পনা ছড়িয়েছে যে বিচারপতি যশবন্ত বর্মার বাড়ি থেকে নগদ টাকা উদ্ধারের ঘটনার পর বিরোধী দলের সমর্থনে তাঁকে অপসারণ নিয়ে শাসকদলের সঙ্গে মতপার্থক্যের কারণেই ধনখড় পদত্যাগ করেছেন।

