রাজা বন্দ্যোপাধ্যায়
ভারতে বিভিন্ন ধর্মের মানুষের বাস। ধর্মনিরপেক্ষ দেশ বটে, তবে ধর্ম নিয়ে মাতামাতির শেষ নেই। ধর্মের নামে গলা ফোলায় রাজনৈতিক দলগুলো। কেউ হিন্দুরাষ্ট্রের পক্ষে কারও আবার মুসলিম-প্রীতি। বিভিন্ন ভাষাভাষী, ধর্ম, সম্প্রদায়ের মানুষ পাশাপাশি বাস করে। তবে কখনও কখনও যে উত্তেজনা ছড়ায় না, তা নয়। আর সে সবের মূলে রাজনীতি। আর এর ফাঁকতালে ফুলেফেঁপে ওঠেন স্বঘোষিত ধর্মগুরুরা। কোটি কোটি কামিয়ে নেন। রাজনীতির কারবারিদের সঙ্গে গা ঘষাঘষি করেন। কোনও কোনও রাজনীতিক তো সটান ডাইভ মারেন সেই সব বাবাদের পায়ে। বাবারাও মন্ত্র ঝাড়েন, জ্ঞান বিলোন।
মোদ্দা কথা, ভারতের মতো দেশে, বিশেষ করে যখন থেকে বিজেপি ক্ষমতায়, হিন্দু রাষ্ট্রের পক্ষে জোর সওয়াল করে আরএসএস, তখন থেকে হিন্দু বাবারাও বুঝে গেছেন, ঝোপ বুঝে কোপ মারার এই তো সময়। তাই তো ভারতের আধ্যাত্মিক জগৎ ভরপুর স্বঘোষিত গুরু, সাধু-সন্ত ও বাবাদের উপস্থিতিতে। কোটি কোটি ভক্তের শ্রদ্ধা ও বিশ্বাস তাঁদের ঘিরে থাকলেও, এঁরা বহু বছর ধরে বিপুল সম্পদও গড়ে তুলেছেন। দেখে নেওয়া যাক দেশের কয়েকজন প্রভাবশালী আধ্যাত্মিক নেতার সম্পদের চিত্র :
•সদগুরু জগ্গি বাসুদেব
যোগ, শিক্ষা ও পরিবেশ রক্ষায় কাজ করে তাঁর ইশা ফাউন্ডেশন। ২০২৩ সালের হিসাবে সদগুরুর সম্পদের পরিমাণ প্রায় ১৮ কোটি টাকা।
•শ্রীশ্রী রবিশঙ্কর
শান্তি ও মানবসেবার জন্য পরিচিত এই গুরু আর্ট অব লিভিং সেন্টার ও স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান চালান। তাঁর সম্পদের পরিমাণ ১,০০০ কোটি টাকা।
•বাবা রামদেব
যোগগুরু রামদেবের প্রতিষ্ঠিত পতঞ্জলি আয়ুর্বেদ ভারতের স্বাস্থ্য ও আয়ুর্বেদ শিল্পে বিপ্লব ঘটিয়েছে। তাঁর মোট সম্পদের পরিমাণ প্রায় ১,৬০০ কোটি টাকা।
•মাতা অমৃতানন্দময়ী
‘অম্মা’ নামে জনপ্রিয় এই কেরল-জন্মা গুরু মানবিক কাজের জন্য খ্যাত। তাঁর ট্রাস্টের সম্পদের পরিমাণ প্রায় ১,৫০০ কোটি টাকা।
•অবধূত শিবানন্দজি
ধ্যান ও সামাজিক উন্নয়নের কাজে যুক্ত। তাঁর সম্পদ প্রায় ৪৩ কোটি টাকা।
•ড. পল দিনাকরন
খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের অন্যতম শ্রদ্ধেয় আধ্যাত্মিক নেতা। করুণা বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলরও তিনি। তাঁর সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৪৫ কোটি টাকা।
•গুরমিত রাম রহিম সিং
১৯৯০ সাল থেকে ডেরা সাচা সৌদার প্রধান এই গুরুর বিপুল সমর্থন রয়েছে দলিত ও হরিজন সম্প্রদায়ের মধ্যে। তাঁর সম্পদ প্রায় ১,৪৫৫ কোটি টাকা।
•আসারাম বাপু
দেশজুড়ে প্রায় ৪০০ আশ্রম ও ১৭,০০০ বাল সংস্কার কেন্দ্রের নেটওয়ার্ক রয়েছে তাঁর। ২০০৮ সালে তাঁর সম্পদ ছিল প্রায় ৫,০০০ কোটি টাকা। ২০২১ সালে তাঁর ট্রাস্টের আয় দাঁড়িয়েছিল প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা।
•স্বামী নিত্যানন্দ
ভারতসহ একাধিক দেশে মন্দির, আশ্রম ও গুরুকুল রয়েছে তাঁর ট্রাস্টের অধীনে। বিভিন্ন প্রতিবেদনের দাবি, তাঁর সম্পদের পরিমাণ প্রায় ১০,০০০ কোটি টাকা।
আধ্যাত্মিক জগতে প্রভাব বজায় রাখলেও, এঁদের বিপুল সম্পদের সাম্রাজ্য দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। কেউ কেউ তো নানা কেলেঙ্কারিতেও হাত পাকিয়েছেন। এই যেমন রাম রহিম বাবা কিংবা আসারাম বাপুর বিরুদ্ধে তো একাধিকবার উঠেছে যৌন কেচ্ছার অভিযোগ। আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ আছে বাবা রামদেবের বিরুদ্ধেও। তবে হাল আমলে এই সব স্বঘোষিত বাবা যে বেশ রসেবশেই আছেন, তা আর বলে দিতে হয় না।