বিহারের আসন্ন নির্বাচনে নারী ভোটারদের ভূমিকা ফের রাজনৈতিক সমীকরণ বদলাতে চলেছে। ২০১০ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই মহিলাদের ভোটদানে পুরুষদের ছাপিয়ে ওঠা নতুন প্রবণতা তৈরি হয়েছে। আর সেই স্রোতে ভেসে ক্ষমতায় দীর্ঘসময় ধরে টিকে আছেন মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার।
২০০৫ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই মহিলাদের ক্ষমতায়নকে কেন্দ্র করে একাধিক পদক্ষেপ করেন নীতীশ কুমার। মদ নিষিদ্ধকরণ আইন তার অন্যতম বড় রাজনৈতিক অস্ত্র, যা ঘরোয়া হিংসা ও অর্থনৈতিক সংকটে ভোগা হাজারো মহিলার সমর্থন কুড়িয়েছে।
এবারও তাঁর সরকার ‘মুখ্যমন্ত্রী মহিলা রোজগার যোজনা’ ঘোষণা করেছে, যেখানে যোগ্য মহিলাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ১০,০০০ টাকা দেওয়া হবে কর্মসংস্থান তৈরির জন্য।
পাশাপাশি ভোটের লড়াইয়ে নতুন মাত্রা যোগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বিরোধী মহাজোটের সভায় তাঁর প্রয়াত মাকে নিয়ে অশালীন মন্তব্যের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, “মোদি হয়ত মাকে নিয়ে অপমান ক্ষমা করতে পারে, কিন্তু বিহারের জনতা এটা কখনও মেনে নেবে না।”
মোদি আরও বলেন, “মা-ই সন্তানদের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেন, আর মাকে অপমান করা মানে প্রতিটি মা ও বোনকে অপমান করা।”
তিনি মঙ্গলবার ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রায় ২০ লক্ষ মহিলাকে সম্বোধন করেন। পাশাপাশি ‘বিহার রাজ্য জীবিকা নিধি’ উদ্বোধন করে ১০৫ কোটি টাকা বরাদ্দ ঘোষণা করেন।
বিরোধী মহাজোটও পিছিয়ে নেই। রাজ্যের বিরোধী নেতা তেজস্বী যাদব রাখিবন্ধনে বিহারের বোনদের উদ্দেশে একাধিক প্রতিশ্রুতি দেন:
•‘বেটি কেয়ার স্কিম’ – জন্ম থেকে চাকরি পর্যন্ত মেয়েদের জন্য পূর্ণাঙ্গ সুরক্ষা প্রকল্প।
•’মাই-বহেন মান যোজনা’ – প্রতি মাসে ২,৫০০ টাকা।
•বিধবা, প্রবীণ ও প্রতিবন্ধী মহিলাদের জন্য মাসিক ভাতা ১,৫০০ টাকা।
•ভর্তুকিযুক্ত এলপিজি সিলিন্ডার ৫০০ টাকায়।
•মেয়েদের জন্য আবাসিক কোচিং, বিশ্বমানের খেলাধুলার প্রশিক্ষণ, বিনামূল্যে পরীক্ষা ফর্ম ও যাতায়াত সুবিধা।
২০০৬ সালে বিশ্বব্যাঙ্কের সহযোগিতায় শুরু হয় ‘জীবিকা প্রকল্প’, যার মাধ্যমে রাজ্যের গ্রামীণ মহিলাদের স্বনির্ভর গোষ্ঠী গড়ে তোলা হয়। এখন প্রায় ১.৪ কোটি মহিলা জীবিকার সঙ্গে যুক্ত। এই প্রকল্প শুধু অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা নয়, বরং বাল্যবিবাহ, পণপ্রথার মতো কুপ্রথার বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলনেও নারীদের যুক্ত করেছে।
বিহারের রাজনীতিতে জাতপাতের অঙ্ক সবসময় গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু নারী ভোটাররা সেই অঙ্ক ভেঙে দিয়ে আলাদা ভূমিকা রাখেন। মহিলারা প্রায়শই পরিবার ও জাতপাতের বাইরে গিয়ে নিজের পছন্দমতো ভোট দেন। তাদের সিদ্ধান্ত অনেক সময়েই রাজনৈতিক মহারথীদের জয়-পরাজয় নির্ধারণ করে দেয়। সেই কারণেই জাতপাতের কার্ড খেলার পাশাপাশি মহিলা ভোট ঝুলিতে টানতে সচেষ্ট যুযুধান দুই পক্ষই।