কলকাতা পুরসভার সদর দফতরের সামনেও হকার। পুর কর্তৃপক্ষের ভমিকায় ক্ষুব্ধ কলকাতা হাইকোর্ট। মঙ্গলবার, এই সংক্রান্ত একটি জনস্বার্থ মামলায়, হাইকোর্টের দু’বছর আগের নির্দেশ কার্যকরী না হওয়ায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিচারপতি সুজয় পাল ও বিচারপতি স্মিতা দাস দে–র ডিভিশন বেঞ্চ। দুই বিচারপতি এদিন পুরসভার তরফে জমা দেওয়া রিপোর্ট দেখেও নিজেদের অসন্তোষ জানিয়েছেন। ডিভিশন বেঞ্চ কলকাতা পুরসভাকে ১৫ দিনের মধ্যে একটি বিস্তারিত হলফনামা জমা দেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছে।
আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও কলকাতা পুরসভা হকার উচ্ছেদ ঘিরে কোনও পদক্ষেপ করেনি। জনস্বার্থ মামলার শুনানি পর্বে দাবি করেছেন আবেদনকারীর আইনজীবীরা। তাঁরা জানান, কোথাও কোথাও হকারদের সরিয়ে দেওয়ার পরও সেখানে আবার হকার ফিরে এসেছে।
ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ, ১৫ সেপ্টেম্বর পুর-কমিশনারকে হলফনামা দিয়ে বিস্তারিত জানাতে হবে, পুরসভার সদর দফতরের সামনে থেকে দখল উচ্ছেদে তারা কী কী করেছে। আদপে ওই দখল সরানো হয়েছে কি না, যদি না হয়ে থাকে তা হলে কবে হবে, কীভাবে হবে।
আদালতের লিখিত পর্যবেক্ষণ, পুরসভার হেড অফিসের সামনে থেকে দখলদার উচ্ছেদ না হওয়া পুর-কর্তৃপক্ষের গা ছাড়া মনোভাবেরই প্রমাণ। ২০২৩–এর ২৭ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল পুরভবনের সামনের দখল উচ্ছেদের। কিন্তু এতদিনেও সেই কাজ হয়নি।
পুরসভার জমা দেওয়া রিপোর্ট দেখে প্রবল বিরক্তি প্রকাশ করে ডিভিশন বেঞ্চের বক্তব্য, ‘আমরা আমাদের প্রবল অসন্তোষ ও বিরক্তির কথা নির্দেশে উল্লেখ করলাম। যে কাজ দু বছর আগে হাইকোর্ট করতে বলেছিল, তা হয়নি। পুরসভার রিপোর্টে মূল প্রশ্নের জবাবই নেই। কোনও স্পষ্ট তথ্য নেই। পুরসভা ইন্টারনাল কমিটি গড়ার কথা বলেছে। সেই কমিটি দখল উচ্ছেদে কী করেছে, বা আদপে করবে কি না, তারও দিশা নেই রিপোর্টে।’ এই অবস্থায় ১৫ দিনের মধ্যে পুরসভাকে নতুন করে বিস্তারিত জানিয়ে রিপোর্ট দিতে বলেছে ডিভিশন বেঞ্চ।
প্রসঙ্গত, সুপ্রিম কোর্টের ২০১৩–র নির্দেশ মেনে কেন্দ্র স্ট্রিট ভেন্ডার্স প্রটেকশন অ্যাক্ট তৈরি করেছিল। সেই আইন মেনে বিধি তৈরি না হওয়ায় এর আগে গুচ্ছ মামলা হয়। ২০১৮–তে রাজ্য সরকার বিধি তৈরি করে। টাউন ভেন্ডিং কমিটি তৈরি হলেও বাস্তবে শুধু কলকাতা নয়, গোটা রাজ্যের কোনও শহরেই রাস্তা থেকে দখলদার উচ্ছেদে কোনও পদক্ষেপ হয়নি বলে অভিযোগ।
মামলাকারীর তরফে আইনজীবী অভিযোগ করেন, দু’বছর আগে এই মামলাতেই হাইকোর্ট সবার আগে পুরসভার হেড অফিসের সামনে থেকে দখল উচ্ছেদের নির্দেশ দিয়েছিল। তা আজও কার্যকরী হয়নি। মহানগরীর প্রাণকেন্দ্র নিউ মার্কেট থানা এলাকার রাস্তা হকার-মুক্ত করার দাবিতেও পৃথক মামলা হয়েছিল। সেই মামলাতেও বহু আগের নির্দেশ কার্যকরী হয়নি।
কলকাতা পুরসভার হেড অফিস নিউ মার্কেট থানা এলাকায়। হকার উচ্ছেদ ঘিরে এক মামলায় সম্প্রতি বিচারপতি গৌরাঙ্গ কান্তর সিঙ্গল বেঞ্চও পুরসভাকে কোনও জটিলতা তৈরি না করে ফুটপাথ এবং রাস্তা দখলমুক্ত করতে পদক্ষেপের নির্দেশ দিয়েছিল। মামলাকারীর আইনজীবী শুনানিতে বলেন, কলকাতা পুলিশ রিপোর্ট দিয়ে বেআইনি দখলের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপের কথা জানালেও পুরসভা কিন্তু কোনও পদক্ষেপ করছে না। ফলে শহরের প্রাণকেন্দ্রে নিত্য যানজট এখন রুটিন মাফিক ঘটনা। হকারদের কারণে পথচারীদেরও নাকাল হতে হচ্ছে। পুজোর মুখে দুর্ভোগ আর যানজটের যন্ত্রণা আরও বেড়েছে।