বাঙালিদের উপর হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তাল হল রাজ্য বিধানসভা। বৃহস্পতিবার বিধানসভার অধিবেশনে ভাষণ দিতে ওঠেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী বলা শুরু করতেই বিজেপি বিধায়করা ওয়েলে নেমে এসে তীব্র চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করেন। বিক্ষোভ দেখান তাঁরা। স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার বিজেপি বিধায়কদের শান্ত হতে অনুরোধ করেন। এমনকি তাঁদের সতর্কও করেন, কিন্তু তাতেও কোনও কাজ হয়নি। চিৎকার চেঁচামেচি চলতেই থাকে। শেষ পর্যন্ত স্পিকার বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ, মিহির গোস্বামী, অগ্নিমিত্রা পল, বঙ্কিম ঘোষ, অশোক দিন্দাকে সাসপেন্ড করেন। এর আগে সোমবার অধিবেশন শুরুর দিনে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে সাসপেন্ড করেছিলেন অধ্যক্ষ।
সম্প্রতি ভিন রাজ্যে বাঙালিদের হেনস্থার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ, বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে বাংলায় কথা বললেই তাদের বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করে পুশ ব্যাক করা হচ্ছে। এই বিষয়টি নিয়েই গত সোমবার থেকে বিধানসভায় চলছে বিশেষ অধিবেশন। বৃহস্পতিবার সকালে বিষয়টি নিয়ে বক্তব্য পেশ করতে ওঠেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলতে শুরু করতেই চিৎকার করে বাধা দিতে থাকেন বিজেপি বিধায়করা। নিজের বক্তব্য থামিয়ে মুখ্যমন্ত্রী স্পিকারকে বলেন, আগে বিজেপি বিধায়কদের বলতে দেওয়া হোক। স্পিকার বিজেপি বিধায়কদের বক্তব্য রাখার অনুমতি দিলেও তাঁরা কোনও বক্তব্য রাখেননি। বরং বিজেপি বিধায়করা শঙ্কর ঘোষের নেতৃত্বে একটানা চিৎকার চেঁচামেচি করতেই থাকেন। স্পিকার বিজেপি বিধায়কদের শান্ত হওয়ার অনুরোধ করলেও তাঁরা সেই অনুরোধে কর্ণপাত করেননি। পরিস্থিতি সামাল দিতে শেষ পর্যন্ত শঙ্কর ঘোষকে সাসপেন্ড করেন স্পিকার। মার্শাল ডেকে তাঁকে বিধানসভা কক্ষ থেকে বের করে দেওয়া হয়। সে সময় মার্শালদের সঙ্গেও ধস্তাধস্তি শুরু হয় বিজেপি বিধায়কদের। এই ঘটনায় শঙ্কর অসুস্থ হয়ে পড়েন বলে বিজেপি বিধায়কদের অভিযোগ। অ্যাম্বুলেন্স ডেকে শঙ্করকে হাসাপাতালে ভর্তি করেন শুভেন্দু। ধাক্কাধাক্কির সময় বিজেপি বিধায়ক বঙ্কিম ঘোষও আঘাত পান বলে দাবি বিজেপির।
শঙ্করকে বিধানসভা থেকে বের করে দেওয়ার পর মুখ্যমন্ত্রী বলতে শুরু করেন। কিন্তু অন্য বিজেপি বিধায়করা ফির চিৎকার করতে থাকেন। বিজেপি বিধায়কদের চিৎকার থামাতে পাল্টা হইচই শুরু করেন তৃণমূল বিধায়করাও। পরিস্থিতি সামাল দিতে মুখ্যমন্ত্রী নিজেই সক্রিয় হন। তিনি তৃণমূল বিধায়কদের শান্ত হওয়ার নির্দেশ দেন। তৃণমূল বিধায়করা নিজেদের আসনে ফিরে গেলেও বিজেপি বিধায়করা চিৎকার চেঁচামেচি চালিয়ে যেতে থাকেন। বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা প্রশ্ন করেন, কেন শুভেন্দু অধিকারীকে সাসপেন্ড করা হয়েছে? শুভেন্দু অধিকারীর সাসপেনশনের প্রতিবাদে নতুন করে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন বিজেপি বিধায়করা। শেষ পর্যন্ত সভার কাজ চালাতে বিজেপি বিধায়ক অগ্রিমিত্রা পল, বঙ্কিম ঘোষ, মিহির গোস্বামী ও অশোক দিন্দাকে সাসপেন্ড করেন স্পিকার।
এদিনের অধিবেশনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপি ও প্রধানমন্ত্রীকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বিজেপি চোর, মোদি চোর। এরা ভোট চুরি করে। এরা মানুষের সর্বস্ব লুট করে। দেশ বাঁচাতে বিজেপিকে হঠাতে হবে। এরা গোটা দেশটাকে বিক্রি করে দিচ্ছে। এরা নির্লজ্জ। বিজেপি এক অগণতান্ত্রিক দল। এরা বাংলা বিরোধী। মানুষ এদের ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে জবাব দেবে। বিধানসভায় এরা শূন্যে পরিণত হবে।
অন্যদিকে বিজেপির পাল্টা অভিযোগ, বিধানসভায় তাদের বলার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। তাদের অধিকার হরণ করছেন স্পিকার। বিমান ব্যানার্জি রীতিমতো পক্ষপাতিত্ব করছেন। উল্লেখ্য, এর আগে জুন মাসে বর্ষাকালীন অধিবেশনেও সভায় অশান্তি পাকানোর অভিযোগে চার বিজেপি বিধায়ককে গোটা অধিবেশনের জন্য সাসপেন্ড করেছিলেন স্পিকার।
