পশ্চিমবঙ্গ স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)-র মাধ্যমে দেওয়া ২৬ হাজার চাকরি বাতিলের বিষয়ে আজ সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করা বিশেষভাবে সক্ষম প্রার্থীদের নতুন দুটি মামলার শুনানি হয়। শীর্ষ আদালত কলকাতা হাইকোর্টের রায় বহাল রেখে সমস্ত মামলা খারিজ করেছে। শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, এই সংক্রান্ত মামলায় কলকাতা হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্ট আগেই যা বলার বলে দিয়েছে। নতুন করে আর কোনও মামলা শোনা হবে না। ফলে অযোগ্য প্রার্থীদের জন্য আর কোনও আইনি আশার পথ খোলা রইল না।
বৃহস্পতিবারের শুনানিতে বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ তিনটি মামলা শোনে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল রাজ্য সরকারের দায়ের করা মিসলেনিয়াস অ্যাপ্লিকেশন। পাশাপাশি পরীক্ষায় বসতে চেয়ে বিশেষভাবে সক্ষম দুই প্রার্থীর মামলাও শোনা হয়। শুনানির শুরু থেকেই সুপ্রিম কোর্ট কড়া ভাষায় জানায়, অযোগ্য প্রার্থীদের পরীক্ষায় বসার অনুমতি দেওয়া যায় না এবং এ ক্ষেত্রে রাজ্যের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।
শুনানির সময় বিচারপতি সঞ্জয় কুমার প্রশ্ন তোলেন, “যখন কলকাতা হাই কোর্ট স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছিল যে ‘দাগি’ প্রার্থীরা পরীক্ষায় বসতে পারবে না, তখন কেন এসএসসি তাদের অ্যাডমিট কার্ড দিল? আদালত একে ‘অবিশ্বাস্য’ বলে আখ্যা দেয় এবং মন্তব্য করে, মনে হচ্ছে এসএসসি নিজেদের প্রার্থীদেরই সুবিধা করে দিতে চাইছে, ওএমআর শিট নিয়ে কারচুপি করেছে এবং এই দাগি এবং অযোগ্য প্রার্থীদের পুনর্বহালের চেষ্টা করেছে।” আদালতের মতে, এই পদক্ষেপ বিচারব্যবস্থার জন্য বড় আঘাত।
আবেদনকারীদের আইনজীবীরা দাবি করেন, তাঁদের মক্কেলরা অযোগ্য নন এবং আগের রায় চ্যালেঞ্জ করেন। তাঁদের আরও অভিযোগ, ২০১৬ সালে বিশেষভাবে সক্ষম প্রার্থীদের জন্য ঘোষিত শূন্যপদের সংখ্যা ২০২৫-এ এসে অর্ধেক করা হয়েছে। এর ভিত্তিতে তাঁরা পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য বাড়তি সময় চেয়েছিলেন।
কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট আবেদনকারীদের সব যুক্তি খারিজ করে দেয়। বিচারপতিরা স্পষ্ট জানান, এই বিষয়গুলি আগেও আদালতে বিবেচনা করা হয়েছে এবং এ ধরনের মামলার শুনানি হয়েছে। আদালত জানায়, কেবলমাত্র যদি কোনও নির্দিষ্ট বিষয় বা বিভাগে অযোগ্য নয় এমন প্রার্থীদের জন্য শূন্যপদ না থাকে, তখনই তা বিবেচনা করা হবে। কিন্তু আবেদনকারীদের আইনজীবীরা তাঁদের মক্কেলদের পদ, স্তর, বিষয় নিয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে ব্যর্থ হন। ফলে আদালত পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য আর সময় দিতে অস্বীকার করে এবং জানিয়ে দেয়, পরীক্ষা পিছোবে না।
অবশেষে বিচারপতি সঞ্জয় কুমার মূল মামলাটি খারিজ করে বলেন, “এই বিষয়গুলি ইতিমধ্যেই আগের রায়ে নিষ্পত্তি হয়েছে।” মিসলেনিয়াস অ্যাপ্লিকেশন দুটিও খারিজ করে আদালত জানায়, আগেও এ ধরনের বিশেষ অনুমতি আবেদন (SLP) শোনা হয়েছে এবং তাতে সহানুভূতির কোনও ভিত্তি নেই। ফলে এসএসসি ও এসএলএসটি-সংক্রান্ত সব মামলা খারিজ করা হচ্ছে।
এই রায়ের ফলে ২৬ হাজার চাকরি বাতিলের সিদ্ধান্ত এখন চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে। একই সঙ্গে এই নিয়ে শীর্ষ আদালতে আর কোনও আবেদন করার রাস্তাও বন্ধ করে দিল সুপ্রিম কোর্ট।